পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রাদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সরকারি কারিগরিতে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন ফায়দা লুটার চেষ্টায় আছে ফ্যাসিবাদিরা। এই সংঘর্ষের ঘটনায় পাইকারি হারে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে পঞ্চগড়ে। এর আগে আওয়াসী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার গণমাধ্যমের কাছে বরাবরের মতই বিরোধী দলকে দায়ী করেছেন এই ঘটনার জন্য। অথচ, দুই পক্ষের উত্তেজনার সময় রাষ্ট্রীয় বাহিনী কাউকে থামানোর চেষ্টা করেনি। এতেই স্পষ্ট হয়েছিল এমন একটি সংঘর্ষের অপেক্ষায় ছিল সরকার।
দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে নয়, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির জন্য সরকার আগে থেকেই এই সংঘর্ষের নানা ইন্দন দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী চাইলেই আগে দুই পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতির সামাল দিতে পারত। কিন্তু তা না করে সংঘর্ষ পর্যন্ত পুলিশ অনেকটা নীরব ছিল। বরং সংঘর্ষের সময় পুলিশ গুলি চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করে পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করেছে।
এদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা ও বাড়িঘরে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১০টি মামলা দায়ের হয়েছে। সব গুলো মামলার বাদী পুলিশ। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই গ্রেফতারে খবর জেলা পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় ১০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানায় আটটি এবং বোদা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। আটটি মামলার বাদী হয়েছে পুলিশ।
পূর্ব ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী আহমদিয়া সম্প্রদায় সালানা জলসার আয়োজন আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এই জলসা বন্ধ ও আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে পঞ্চগড় শহরে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে খতমে নবুয়ত। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরে বড় মিছিল হয়।
এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বিভিন্ন বাড়িঘরে ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করতে এই ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের নেপথ্যে কারা ছিল সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ সময় শহরের মসজিদ পাড়া মহল্লার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।
এদিকে শনিবার রাতে দুজনকে আহমদিয়ারা গলা কেটে হত্যা করেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। যাতে পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যায় এবং সরকার ফায়দা লুটতে পারে এজন্যই এমন গুজব রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী থেকেই ছড়ানো হয় বলে জানা গেছে। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নিজেরা গলাকাটা লাশ দেখে এসেছেন জানিয়ে লোকজনকে উত্তেজিত করে তোলার অপচেষ্টা করেন গুজকারীরা। এ নিয়ে ফের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। এ সময় দুটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট এবং একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
ফ্যাসিবাদী সরকার দুর্নীতি, দু:শাসন ও দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ থেকে দৃষ্ঠি ভিন্নখাতে সরানোর জন্যই সরকার এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ তৈরি করছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।