মেডিক্যালের ভর্তিযুদ্ধে প্রথম রাফসান, ৫৫ মিনিটে সব উত্তর

0

১০০টি প্রশ্ন। প্রথম ৩০ মিনিটেই আমি ৭০টি ও পরের ২৫ মিনিটে বাকি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলি।

সব উত্তর দিতে সময়ে লাগে মাত্র ৫৫ মিনিট। ৯৪ দশমিক ২৫ পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি।

পরীক্ষার পরে রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঠিক লিখেছি কিনা- সেটা নিয়ে অনেক টেনশন করেছি। যদিও পরীক্ষার হলে কয়েকবার চেক করেছিলাম।

বাংলানিউজকে অকপটে এসব কথা বলেন মেডিক্যাল ভর্তিযুদ্ধে দেশের ১ লাখ ৪০ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হওয়া রাফসান জামান। বাড়ি রংপুর সদরে হলেও তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকেন চট্টগ্রামে।

রাফসানরা এক ভাই, এক বোন। বোন সাদিয়া ইবনাত চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। বাবা একেএম শামসুজ্জামান। মা কাউছার নাজনীন মনি গৃহিণী।

রাফসান এসএসসি ও এইচএসসি পড়েছেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। দুটি পরীক্ষাতেই গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছেন। তার বাবাও একই স্কুল ও কলেজ থেকে পাস করেছিলেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পদার্থ, বায়োলজি ও গণিত অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছেন রাফসান। রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোন বিষয়টি নিয়ে পড়তে চান- এমন প্রশ্নের জবাবে রাফসান বলেন, ‘নিউরোসায়েন্স। ’ ছোটবেলা থেকেই এসব বিষয়ে আগ্রহ ছিল। তাই মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার পর ভাবলাম, ছোটবেলার সেই আগ্রহের বিষয়টা বেছে নিই। তাই নিউরোসায়েন্সকে বেছে নিয়েছি। এ বিষয়ে আমি যতদূর সম্ভব পড়াশোনা করতে চাই। ’

তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কনফিডেন্স ছিল কিন্তু প্রথম হবো এটা ভাবিনি। প্রথম যখন রেজাল্ট শুনেছিলাম তখন বিশ্বাস হয়নি। দুপুরের পর কোচিং থেকে ফোন করে রেজাল্ট জানানো হয়। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে নিজের চোখে রোল নম্বর দেখে বিশ্বাস করি।

মোবাইল ফোনের প্রতি কোনোভাবেই আমি আসক্ত ছিলাম না। আমি পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা শেষে কোচিং সেন্টারের কিছু তথ্য আদান প্রদানের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতাম। বর্তমান জেনারেশন মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়েছে। যার কারণে পড়াশোনার চেয়ে অন্য বিষয়ে মনোযোগী হয়ে পড়েছেন।

এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই মেডিক্যাল ভর্তির কোচিংও করেছি। পরে বাসায় নিজে নিজে পড়েছি।

ফলাফল ঘোষণার দিন রাফসানের বাবা চট্টগ্রামের সিটি গেইট এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ছেলের রেজাল্টে বাবার কর্মস্থলের সবাই খুব খুশি।

ছেলের সাফল্যে কেঁদেই ফেলেন মা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাকে পুরস্কৃত করেছেন। আমার ছেলে যাতে ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে।

তিনি বলেন, রাফসান ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। খুব বেশি সময় না পরলেও যতোটুকু পড়ত ততটুকু মনোযোগ দিয়েই পড়ত। ক্লাসে বরাবরই ভালো রেজাল্ট ছিল তার। রংপুর ক্যাডেট কলেজে থেকে ক্লাস মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। ’

মা বলেন, যখন থেকে মেডিক্যালে ভর্তির পড়াশোনা শুরু করেছে তখন থেকে ওর সঙ্গে থাকতাম। হয়তো কখনও ঘুমিয়ে গেছে। তবে যখই সে উঠে বাথরুমে বা অন্য কাজে যেত তখন মনে হতো ওর কিছু দরকার কিনা। কফি বানিয়ে বসে থাকতাম ওর পাশে। এখন এসবের ফল পাচ্ছি, ছেলে পুরো দেশে ফার্স্ট হয়েছে, আশা করি এর চেয়েও বড় সাফল্য ভবিষ্যতে আসবে। ’

বাবা একেএম শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ছেলে মেধাবী সেটি আমরা নিশ্চিত। কিন্তু এতো ভালো ফলাফল করতে সেটা আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। ছেলে মেডিক্যালে প্রথম হয়েছে শুনে আমি অবাক হয়েছি। পড়ালেখার প্রতি তার যে মনোযোগ সেটিই তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।

উৎসঃ   বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More