জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, সরকারের হাতে টাকা নেই। এমন বাস্তবতায় সরকার নতুন করে এক লাখ কোটি টাকা ছাপাচ্ছে। এ জন্য দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি ও মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার গোঁজামিল দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে এবং ধার করে দেশ চালানোর চেষ্টা করছে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বলে প্রতিদিন দেশকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার বেলা ১১টায় সাংবাদিকদের জিএম কাদের এসব বলেন।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের নামে আমরা যা দেখছি বিশাল বিশাল অবকাঠামো হচ্ছে, মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। এর সুফল আমরা এখনো দেখিনি। গত বাজেটের সময় জনপ্রতি ঋণের ভার ছিল প্রায় এক লাখ টাকা। এখন ঋণের বোঝা আরও বাড়বে’।
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রবাসীদের আয় এবং রপ্তানি থেকে যে আয় হয়, তার চেয়ে দেশের ব্যয় অনেক বেশি। সরকার রিজার্ভের যে হিসাব দিচ্ছে, তা আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার কম। সরকার বলেছে, রিজার্ভ আছে ৩১ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ বলছে, এখানে অন্তত ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার নেই। এই টাকা বিভিন্ন জায়গায় ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং লগ্নি করা হয়েছে।
সরকারি তহবিল–সংকটের উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এ বছর ঋণ ও আসল পরিশোধ করতে হবে ২৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। সরকারি হিসাবে বকেয়া ১৮ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি এবং ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে এখনই শোধ করতে হবে। অতীতের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে সরকারের হাতে কোনো টাকা থাকার কথা নয়।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ‘আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা ঋণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা আমাদের ঋণ না দিলে দেশ যেকোনো মুহূর্তে দেউলিয়াত্বের মধ্যে চলে যেতে পারে। উন্নয়নের নামে বড় বড় মেগা প্রকল্প হয়েছে। গুটিকয় মানুষ লাখ-কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য অশুভ হয়ে দাঁড়াবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে স্বাভাবিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। তবে কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
জিএম কাদের বলেন, বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ করে কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সরকার দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। এমন অবস্থায় বা এমন কাঠামোতে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়ার বিষয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা এমনই রাখবে, নাকি কিছু পরির্বতন করবে, তা আমরা এখনই জানি না। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে নির্বাচনের আগে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, দুটি দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) নিজের অবস্থানে অটল আছে। এমন অবস্থা থেকে তাদের বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। দল দুটি মনে করছে, এক দল ছাড় দিলে অন্য দল ধ্বংস হয়ে যাবে। বাঁচার জন্য দুটি দল জীবনপণ লড়াই করবে। সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে দেশ ধাবিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে জাপা সুপারিশমালা দেবে বলে জানান দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে দুপুরে চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেক কেটে দিনটি উদ্যাপন করে।