ডয়েচে ভেলের রিপোর্ট খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র: স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র ভেদান্ত
বাংলাদেশ ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে ডেথ স্কোয়াডের গঠন করে গুরুত্বর মানবাধিকার লংঘনের নতুন যে অভিযোগ উঠেছে তা সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে মানবাধিকার লংঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে ব়্যাবের চরম মানবাধিকার লংঘন নিয়ে সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক ডয়চে ভেলে এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের যৌথ অনুসন্ধানি ডকুমেন্টারি প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল।
ব়্যাবের এক হুইসেলব্লোয়ার বলেছেন-“প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের নির্দেশ দিবেন বলে মনে হয়না।” ডকুমেন্টারির এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র কী চলমান নিষেধাজ্ঞা বাড়াবে নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলায়ের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে?
জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল জানান পুরো ডকুমেন্টারি এবং রিপোর্টটি তারা সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখবেন।
ডয়চে ভেলে এবং নেত্র নিউজের যৌথ অনুসন্ধানি রিপোর্ট ‘ডেথ স্কোয়াড’: ব়্যাবের ভেতরের কথা- প্রকাশিত হওয়ার পরপরই রিপোর্টটি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। নতুন করে সামনে এসেছে দেশের ভিতরে মানবাধিকার লংঘনের ভয়ংকর এক চিত্র। দুই হুইসেলব্লোয়ার বর্ণনা দিয়েছে বাহিনীটির দ্বারা সংঘটিত লোমহর্ষক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলো। সেদিকে ইঙ্গিত করে ব্রিফ্রিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, “সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক ডয়চে ভেলে এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ তাদের এক যৌথ অনুসন্ধানি ডকুমেন্টারিতে বলেছে বাংলাদেশের এলিট বাহিনী ব়্যাব বিচারবর্হিভূত এবং রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এই প্রথম ব়্যাবে কাজ করা দুই সদস্য হুইসেলব্লোয়ার হিসেবে বাহিনীটির ‘ডেথ স্কোয়াডে’র ভিতরের কর্মকান্ড নিয়ে মুখ খোলেছে। তারা বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিবেন বলে মনে হয়না।” এথেকে বুঝা যায় বাংলাদেশে একের পর এক মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে, সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। আমরা জানতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র কী এ ঘটনার প্রেক্ষিতে চলমান নিষেধাজ্ঞা বাড়াবে কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলায়ের শীর্ষস্থানীয়দের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে?”
জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, “আমি এখনই অ্যাকশন নেয়ার বিষয়টি খোলাসা করতে পারবোনা। রিপোর্ট এবং ডকুমেন্টারিতে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। আশা করি অভিযোগগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারও একই পদক্ষেপ নিবে।”
মানবাধিকার লংঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রধান উপমুখপাত্র।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল ‘ডেথ স্কোয়াড’: ব়্যাবের ভেতরের কথা-এই শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ডয়চে ভেলে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের অভিজাত সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত, জানাচ্ছে ডয়চে ভেলে এবং নেত্র নিউজ এর এক নতুন অনুসন্ধান৷ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই এসব হত্যার অনুমতি দেন৷
রিপোর্টে বলা হয়, সেনা এবং পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এই বাহিনীকে নিয়ে কয়েক মাস ধরে ডয়চে ভেলের ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ যৌথ অনুসন্ধান চালিয়েছে৷ প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর এই প্রথম এই বাহিনীতে কাজ করা দুই সদস্য এই ‘ডেথ স্কোয়াড’ এর ভেতরের তথ্য জানালেন৷
ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া দুই ব্যক্তিই আরো অনেক অভিযোগ করেছেন৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রাজনৈতিক স্বার্থে এই অভিজাত বাহিনীকে ব্যবহার করেন৷ অভিযোগ রয়েছে, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থেকে এসবের অনুমোদনও দেয়া হয়৷
লক্ষ্যবস্তু যদি রাজনৈতিক ব্যক্তি হয় তাহলে কেবল উচ্চপর্যায়ের সুস্পষ্ট অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এটি বাস্তবায়ন করা হয়৷ সাক্ষাৎকার দেয়া এক কর্মকর্তা বলেন, এসব ক্ষেত্রে “সিদ্ধান্ত সর্বনিম্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসবে৷ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই আদেশটা প্রদান করে থাকেন৷”
ওই রিপোর্টে অন্য সাক্ষাৎকারদাতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কোনো নির্দেশ দিবেন বলে মনে হয় না৷”