সময় এসেছে সকল নির্মূল কমিটির দোকান বন্ধ করে দেওয়ার : মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কাজের পাশাপাশি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও বেশ সরব। নিজের কাজের ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে প্রায়ই কথা বলে থাকেন তিনি। কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না- এমনটাও শোনা যায় তার বেলায়। এবার এই নির্মাতা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন তার ফেসবুকে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের উদ্বেগ, উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমান এই পরিস্থিতিকে ‘উত্তপ্ত তাওয়ার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
ফারুকীর কথায়, ‘আমরা মোটামুটি উত্তপ্ত তাওয়ার উপর বসে আছি। অনেকেই যেতে আসতে তাওয়ার নিচের আগুনে তুশ ছুঁড়ে দিচ্ছে, কেউবা দিচ্ছে ঘি। সামনের ডিসেম্বর আসতে আসতে এই তাওয়ার অবস্থা কি হয়- এই নিয়া বড় আতঙ্কে আছি। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই এরকম একটা উৎকন্ঠার মধ্যে আছেন। এই উৎকন্ঠা একমাত্র দূর করতে পারত আমাদের দূরদর্শিতা, আমাদের দিলের রহম, আর সহাবস্থানে ইচ্ছুক মন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সকল কমিটিই নির্মূল কমিটি। আমাদের সকল আদর্শই অপর আদর্শকে বিনাশ করার মধ্যেই নিজের গৌরব খুঁজে পায়! এখানে যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা ক্ষমতার বাইরের দলকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়! এবং এটা পালাক্রমে চলতেই থাকে, মাত্রার তারতম্য থাকে শুধু। এই নিশ্চিহ্ন করার বাসনা ব্যক্তিজীবনেরও এত গভীরে চলে যায় যে, শাহরিয়ার কবিরকে না চেনার অপরাধে সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠাইয়া দিতে মন চায় আমাদের। যেনো কিম জং উনকে না চেনার অপরাধে বসা এক কোর্ট মার্শাল। আমাকেও এরকম বহু মব ট্রায়ালে পাকিস্তানে পাঠাইয়া দেওয়া হইছে। কোনো কোনো ট্রায়ালে ভারতে পাঠাইয়া দেওয়া হইছে।’
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রসঙ্গ টেনে ফারুকী লিখেছেন, ‘২০১৪ বা ১৫ সালের দিকে একটা লেখায় লিখছিলাম, এই দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একটা বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের পক্ষে বিএনপি সমর্থক কোটি কোটি মানুষকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া সম্ভব না। বিএনপির পক্ষেও তা সম্ভব না। এমনকি জামায়াতে ইসলামী প্রায় দশ বছর প্রবল চাপের মুখে থেকেও সেদিন সমাবেশে দেখিয়েছে, আপনি চাইলেই কোনো একটা আদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের মুছে দিতে পারেন না। বরং এই চেষ্টায় আখেরে যেটা হয় সেটা হলো আমাদের কালেকটিভ শক্তির ক্ষয়! জাতির প্রাণ শক্তি ক্ষয় হয়।’
সবশেষে এই নির্মাতা বলেন, ‘আমরা তো অনেক কিছুই ছেড়ে আসছি। উন্মুক্ত স্থানে টয়লেট করা বাদ দিছি। অ্যানালগ ফোনের জায়গায় মোবাইল টেপা শিখছি। একসঙ্গে থাকাটা কেন শিখতে পারবো না? কেন এটা বুঝতে চাইব না সবাই আমার মতো একই দল করবে না, একই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হবে না, সবাই একই রকম খাবার খাবে না, একইভাবে ভালোবাসবে না? কেন এটা বুঝতে চাইবো না, যার যার স্টেক নিয়ে সমাজের সব পক্ষই পাশাপাশি থাকবে? তর্ক হবে, বিতর্ক হবে, কিন্তু নির্মূলের ব্যর্থ চেষ্টা হবে না। সময় এসেছে সকল নির্মূল কমিটির দোকান বন্ধ করে দেওয়ার।’