১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের অনেকেই কাপুরুষের মত পালিয়ে গিয়েছিল। অনেকে খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। আবার অনেকে নিরবতা পালন করেছিল। নানা কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বিতর্কিত। এই নেতাদের বেশিরভাগই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আর নেই। বয়সের ভারে তারা পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। কিন্তু এ সকল বিতর্কিত, বিশ্বাসঘাতক, কাপুরুষ নেতাদের অনেক উত্তরাধিকাররা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠছে। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানামুখী আলোচনাও চলে।
২০২১ সালে খুনি মোশতাকের ভাগ্নি জামাই খন্দকার সাইফুল্লাহ কুমিল্লা’র লালমাই উপজেলার ৬নং পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছিল এটি জানাজানির পর তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। খুনি মোশতাকের অনেক আত্মীয় কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে বলে জানা যায়। তারা অনেকেই খুনি মোশতাকের পরিচয় গোপন করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর বরিশাল অঞ্চলে আওয়ামী লীগের এক নেতা বিজয় মিছিল করেছিলেন। এই তথ্য জানিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। ওই আওয়ামী লীগের নেতা সেই সময় মোশতাকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। পর অবশ্য নানা ঘাট পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি’ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নেই। কিন্তু তার কন্যা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের আরেকজন বিতর্কিত নেতা যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খুনি মোশতাকের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, তিনিও এখন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মালেক উকিল বিদেশ থেকে বলেছিলেন, দেশ ফেরাউনের হাত থেকে মুক্ত হল। মালেক উকিলের এউ উক্তি নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করেছিল। পরবর্তিতে অবশ্য মালেক উকিল আওয়ামী লীগে ফিরে এসেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের আগে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। কিন্তু ৭১’এর ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। মালেক উকিলের সন্তানরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্নভাবে ক্রমশ সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।
৭৫’এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের খুনি মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছিলেন সিলেট অঞ্চলের নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী। দেওয়ান ফরিদ গাজীর সন্তান এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেকেই এরকমভাবে ওই সময় যারা কাপুরুষের মত আচরণ করেছিল, যারা বিভিন্ন সময় সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেননি, যারা খুনি মোশতাকের সাথে ভয়ে কিংবা কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশায় হাত মিলিয়েছিলেন তারা রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হননি।
এখনও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের মধ্যে মেজর জেনারেল (আবঃ) শফিউল্লাহ রয়েছেন। ৭৫’এর ১৫ আগস্টে যার ভূমিকা শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয় আপত্তিকরও।
সেই সময় খুনি মোশতাকের আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন বিমান বাহিনীর প্রধান এ.কে. খন্দকার। তিনিও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হয়েছিলেন।
খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন প্রয়াত আবদুল মান্নান। ডিগ্রিতে থাকা অবস্থায় তিনি টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনও তার সন্তানরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
কেউ কেউ মনে করেন যে, পিতাদের ভুলের মাশুল তার সন্তানরা দেবে কেন? পিতারা ভুল করেছেন সেই ভুল শুধরে সন্তানরা রাজনীতিতে আসতেই পারে। আবার এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, যারা কাপুরুষ, ভীতু, তাদের সন্তানরাও সংকটে সঠিক পথে দায়িত্ব পালন করবে এমনটি ভাবার করার কোন কারণ নেই। আগস্ট এলেই এই বিতর্ক আওয়ামী লীগে দানা বেঁধে ওঠে।