সিন্ডিকেটের দখলে ওমরাহ টিকিট

বিমান বাড়িয়েছে টিকিট প্রতি ৭ হাজার টাকা : নামসহ টিকিট বিক্রির দাবি আটাবের

0

ওমরা টিকিটের ওপর আবারো শকুনের থাবা পড়েছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর নাম ছাড়া বুকিং দেখিয়ে ওমরা টিকিট বিক্রির (সেলস পলিসি) সুবাদে টিকিট সিন্ডিকেটগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে ওমরা টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। শতবার চেষ্টা করেও বিমানের সিষ্টেমে কোনো ওমরাযাত্রীর টিকিট মিলছে না। বিমানের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সিন্ডিকট চক্র ওমরা টিকিট বøক করে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠছে। ওমরা টিকিটের জন্য হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। এক মাস ধরণা দিয়ে বিমানের মতিঝিল অফিস থেকে একটি ওমরা টিকিট কিনতে সক্ষম হননি আবাবিল হজ এজেন্টের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ।

গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিমানের সিষ্টেমে গিয়ে কোনো ওমরা টিকিট মিলছে না। অথচ গ্রæপ ফেয়ারে টিকিট বিক্রির বিধান না থাকার পরেও আগামী ২৬ আগস্ট বিমানের ৩৩৭ ফ্লাইটে ঢাকা-মদিনা- জেদ্দা-ঢাকা রুটে যাওয়া আসার ৩৫জন ওমরা গ্রæপের টিকিট ৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে একটি ট্রাভেলস এজেন্সি কি ভাবে বিক্রির অফার দিচ্ছে বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, বিমান ন্যাশনাল ক্যারিয়ার। প্রতেক নাগরিকের অধিকার রযেছে বিমানের টিকিট ক্রয় করে হজ ও ওমরায় যাওয়ার। কিন্ত অবস্থার দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এই সংস্থাটি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। তিনি বলেন, ওমরা টিকিটের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কিনতে হচ্ছে। এতে ওমরাযাত্রী এবং ওমরা এজেন্সির মালিকদের মাঝে প্রতিনিয়ত বাকবিতাÐ হচ্ছে।

ওমরা টিকিট সঙ্কট চরম আকার ধারণ করায় গতকাল রাত ১টা ৪০ মিনিটে এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট (নং ইকে ৫৮৫) যোগে ১০ জন ওমরাযাত্রীকে ওয়ানওয়ে টিকিট ৮১ হাজার টাকা করে জেদ্দায় পাঠানো হয়েছে। এসব যাত্রীদের সউদী থেকে ফিরতি টিকিট কিনে দেশে ফিরতে হবে। আবাবিল হজ এজেন্টের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ইনকিলাবকে বলেন, ওমরাযাত্রীরা দেশের স্বার্থে বিমানেই চলাফেরা করে থাকেন। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ যদি অন্য বিমানের মতো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, সিÐিকেটের খপ্পরে পড়ে তাহলে কীভাবে হবে? এটা খুবই দুঃখজনক। আশা রাখি অন্তত ওমরাযাত্রীদের যেন কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়, আর্থিক ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি নজর দিবেন তারা।

আল নাসের এভিয়েশনের স্বত্বাধিকারী আলহাজ আব্দুল্লাহ আল নাসের গতকাল ইনকিলাবকে জানান, ওমরা টিকিট নিয়ে তুঘলকি কারবার শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও ওমরা টিকিট মিলছে না। তিনি বলেন, টিকিট সঙ্কটের দরুণ আগামী ১০ সেপ্টেম্বর একটি ট্রাভেলসের মাধ্যমে ৮৬ হাজার টাকা করে প্রায় ৪৫ জন ওমরাযাত্রীর টিকিট কিনতে বাধ্য হয়েছি। তিনি ওমরা টিকিট সঙ্কট দ্রæত নিরসনের জন্য আগামী মাস থেকে সাউদিয়া ও বিমানের অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর জোর দাবি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই আগস্ট মাসে সালাম এয়ার, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়া ঢাকা-জেদ্দা রুটে যাওয়া আসার ওমরা টিকিট বিক্রি করেছে ৭০ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকায়। বিমান ওমরা টিকিট বিক্রি করেছে যাওয়া আসার ৮৮ হাজার টাকায়। সাউদিয়া (এসভি) ওমরা টিকিট বিক্রি করেছে জনপ্রতি ৯০ হাজার টাকা। সাউদিয়া এয়ারলাইন্স (এসভি) আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা-জেদ্দা রুটের ভাড়া ৮ হাজার টাকা কমিয়ে ৮২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্ত বিমান ৮৮ হাজার টাকার ওমরা টিকিটের দাম আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরো ৭ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করছে। এতে ওমরাযাত্রীর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। এতে বিমানের প্রতি ওমরাযাত্রীদের অনীহা বাড়ছে। তারা বাধ্য হয়েই বিদেশি এয়ারলাইন্সের দিকে ঝুকছেন।

বিমানের ওমরা টিকিটের দাম ৭ হাজার টাকা বৃদ্ধির সুবাদে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ওমরা টিকিটের দাম আরো বাড়াতে উৎসাহিত হবে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর নাম ছাড়া বুকিং দিয়ে ওমরা টিকিট বিক্রির সেলস পলিসির দরুণ সিন্ডিকেট চক্র ওমরা টিকিটের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। আটাব কর্তৃপক্ষ ওমরা টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ এবং টিকিটের দাম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর নাম ছাড়া বুকিং দিয়ে টিকিট বিক্রির সেলস পলিসি বন্ধ রাখার জন্য কার্যকরি উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

আটাবের মহাসচিব আব্দুল সালাম আরেফ গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে ওমরা টিকিটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো নাম চাড়া বুকিং দিয়ে ওমরা টিকিট বিক্রির (সেলস পলিসির) দরুণ টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। বেশি ফায়দা লুটার জন্যই বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো নাম ছাড়া বুকিং দিয়ে টিকিট বিক্রির পলিসি অনুসরণ করছে। এতে ওমরা টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেট চক্র সঙ্কট সৃষ্টি সুযোগ পাচ্ছে। আটাব মহাসচিব এয়ারলাইন্সগুলোর নাম ছাড়া টিকিট বিক্রির সেলস পলিসি বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামান করেন। তিনি বলেন, নাম ছাড়া টিকিট বিক্রির সেলস পলিসি বন্ধ করতে পারলে টিকিটের দাম ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা কমে যাবে। এতে ওমরাযাত্রীরা সিন্ডিকেটের কবল থেকে মুক্তি পাবেন। বিমানের অসাধু কর্মকর্তারা ১০/১৫টি পছন্দের ট্রাভেলস এজেন্টকে ওমরা টিকিট দিয়ে সিট আটকে রাখায় টিকিট সঙ্কট চরম আকার ধারণ করছে বলেও আটাব মহাসচিব উল্লেক করেন। আটাব মহাসচিব ওমরাযাত্রীদের সুবিধার্থে সপ্তাহে আরো তিনটি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর দাবি জানান।

আটাবের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) আলহাজ এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর গতকাল রাতে ইনকিলাবকে ওমরা টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ওমরাযাত্রীদের টিকিটেও অশুভ নজর পড়েছে সিন্ডিকেটের। তিনি বলেন, ওমরা টিকিটের দাম সীমাহীন বাড়ছে এবং টিকিট বিক্রিতে কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ নেই। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার ‘অসাধু কর্মকর্তাদের’ যোগসাজশে সউদী রুটের ওমরার টিকিট অগ্রিম বুকিংয়ের নামে বøক করে ফেলা হয়েছে। তবে চাহিদামাফিক অতিরিক্ত টাকা দিলে ঠিকই মিলছে বিমান টিকিট। তিনি বলেন, ওমরাযাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্ত ফ্লাইট সংখ্যা কম। তিনি সকল এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান।

inqilab

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More