নির্বাচন পরবর্তী প্রথম বিদেশ সফরে জার্মানি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটিতে অনুষ্ঠেয় মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণই সফরটির মুখ্য উপলক্ষ। তবে পাশাপাশি দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে। নিরাপত্তা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈশ্বিক ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, সম্মেলনের ফাঁকে যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে তার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এর আগে ২০১৯ সালে নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ পেলেও নির্বাচনোত্তর তার প্রথম সরকারি সফর জার্মানি দিয়ে শুরু হতে পারে। জার্মান নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও সাইডলাইনে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি। আগামী ১৬ থেকে ১৮ই ফেব্রুয়ারি মিউনিখের হোটেল বেরিসচার হোফে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন (এমএসসি) অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকরা জানায়, আবারো বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি বিষয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের নেতাদের বিতর্কের জন্য অনন্য সুযোগ দেবে এমএসসি ২০২৪।
১৯৬৩ সালের শরতে প্রতিষ্ঠিত এমএসসি পরবর্তী প্রধান সম্মেলনে ৬০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করবে। প্রতি বছর নিরাপত্তা সম্মেলনের আগে প্রকাশ করা হয় মিউনিখ নিরাপত্তা প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে বর্তমান সুরক্ষা নীতি সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য-উপাত্ত এবং গ্রাফিক্স রয়েছে, যা এমএসসি’র বিখ্যাত অংশীদার প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সংকলন করা হয়েছে। মিউনিখ নিরাপত্তা প্রতিবেদন মিউনিখের সম্মেলনে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ওদিকে গতকাল ঢাকাস্থ জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রাস্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল মিউনিখ সম্মেলনের সাইডলাইনে সম্মেলনে যোগদানকারী অন্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্মরণ করা যায়, ২০১৮ সালে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন দিয়ে তার বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন। ২০২৩ সালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ফ্রান্স ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ: এদিকে গতকাল জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম টোস্টার ছাড়াও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপোয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তারা উভয়ই প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো তাদের শীর্ষ নেতার অভিনন্দনপত্র হস্তান্তর করেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্স ও জার্মানি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। স্বাধীনতার পরপরই যে গুটিকয় দেশ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল, দেশ দুটি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জার্মানি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হচ্ছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ফ্রান্সও আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান উপরের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের পর জার্মানি ও ফ্রান্সে বাংলাদেশ থেকে অনেক যুদ্ধশিশুদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর জার্মানিতে আমাদের যুদ্ধশিশুদের নেয়া হয়েছিল। যুদ্ধশিশু বলতে তাদের বোঝায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার কারণে যেসব শিশুর জন্ম হয়েছিল। অনেক যুদ্ধশিশুকে জার্মানি নিয়ে গিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে ফ্রান্সেও কিছু গিয়েছিল। তবে জার্মানিতে ব্যাপক হারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে, যারা পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। আমি এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছি, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি।
Mzamin