ফয়সাল আহমেদ: স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর বহুমাত্রিক সহযোগিতার বিকাশ ঘটে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিস্তার ঘটে, বিশ্বব্যাপী দারিদ্রতা হ্রাস পায়। উন্মুক্ত ও উদার অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী সম্ভবত চীন। কিন্তু এই শক্তিশালী চীন এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক পরাশক্তি ইন্ডিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিজেদের করায়তে রাখার অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসন ফিলিস্তিনিদের বাস্তবচ্যুত করা এই পরিস্থিতিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন খুবই গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বব্যাপী ভু-রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধবিগ্রহ এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতায় মনোনিবেশ না করে নিজেদের সুবিধা আদায়ের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক আলেকসি নাভালনির মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে শুরু হয় ৬০ তম নিরাপত্তা সম্মেলন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা ঐক্যমত্য ছিলেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন নাভালনির মৃত্যুর জন্য দায়ী। নিরাপত্তা সম্মেলনের শুরুতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হারিস ন্যাটো এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিদের সাথে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন রাশিয়ার আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র – ন্যাটো এবং সহযোগীদের সাথে একসাথে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনসকি আরো অস্ত্র ও গুলা বারুদ চেয়ে বলেন যে, যুদ্ধ কখন শেষ হবে ইউক্রেনকে জিজ্ঞেস করবেন না, নিজেদের জিজ্ঞেস করেন। তিনি আরো অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার অভাবের সমালোচনা করেন এবং বিশ্বকে বিভক্ত করার বিষয়ে সতর্ক করেন। স্নায়ুযুদ্ধ ও আজকের চেয়ে কম বিপজ্জনক ছিলো বলে তিনি মন্তব্য করেন। আজকের গ্লোবাল অর্ডার সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না বলে ও তিনি সমালোচনা করেন।
তিনি গাজায় ইসরাইলের হামলার সমালোচনা করে বলেন, কোন কিছুই সাত অক্টোবরের হামাসের হামলার ন্যায্যতা দিতে পারে না কিন্তু ইসরাইলি সামরিক অভিযানের দ্বারা গাজা বাসীদের “সম্মিলিত শাস্তিকে” ন্যায্যতা দিতে পারি না। তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, জিম্মিদের মুক্তি এবং দ্বি- রাষ্ট্রীয় সমাধানের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে আজারবাইজান ডেনমার্ক ইউক্রেন এবং জার্মানির প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর ৫ হাজার সদস্যের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢাকা এ সম্মেলনে বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রায় ৮০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও ভিক্ষুক মিছিলের আয়োজন করে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা সম্মেলনের অদুরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে এবং ইউক্রেনে হামলার প্রতিবাদে, জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলন ঘিরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।