লিমা আকন্দঃ আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়, জ্ঞানহীনতা অথবা জ্ঞানসমৃদ্ধ মূর্খতা আজ আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? সেটা কি আমরা একটি বারও ভাববার চেস্টা করেছি? ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও গোষ্ঠী হিসেবে প্রতি মুহূর্তে আমরা হেরে যাচ্ছি আমাদের বিবেকের কাছে। অথচ আমাদের গোঁয়ার্তুমি সেই হেরে যাওয়া বিবেকহীন র্নিলজ্জ সত্তাকে দেখে লজ্জিত হচ্ছে না একটি বারের জন্যেও। বরং আধুনিকতা ও সচেতনতা নামক ডিজাইনার পোশাক পরিয়ে তার পরিদর্শনে ব্যস্ত থাকছে। আজ আমাদের এই নির্লজ্জ বেহায়াপনার কিছুটা সাতকাহন গাইবো।
যতই আমরা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করিনা কেন, বাংলাদেশী হিসেবে আমরা আসলে রাজনীতি কি সেটা জানিনা বা বুঝি না। কারন যে দেশে রাজনীতির সঠিক কোন ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, শিক্ষার আদান-প্রদান ও প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা চলে না, সেখানে জানার ক্ষেত্র রুদ্ধ। কেউ কেউ ব্যাক্তিগত তাড়নায় স্বশিক্ষিত হন। কেউবা মার্কস-লেনিন আয়ত্বের প্রচেস্টায় হজম-বদহজমের প্রক্রিয়ায় পরে যান। হজমকারীদের ধারন ক্ষমতার প্রাবল্যের কারনে কেউ কেউ পুরো জ্ঞানটাকেই হজম করে নিজস্ব ধারায় প্রবাহিত হন আর যারা পারেন না তারা সম্পূর্নই উগড়ে দিয়ে মিশ্রিত পথ বেছে নেন।
ধর্মকে পুঁজি করে যারা রাজনৈতিক শিক্ষাগ্রহনের চেস্টা করছেন তারা এর আসল শিক্ষাকে গ্রহন না করতে পেরে সংকীর্ন ও সীমাবদ্ধ জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত হয়ে যে মিশ্রন তৈরী করছেন তাতে আর যাই হোক রাজনীতির বোধগম্যতা হচ্ছে না। ফলে ইসলামের যে উদারতা ও মানব কল্যান তার পুরোটাই ঢাকা পরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামক যে দুটো প্রভাবশালী দল রাজনীতি করছে শুধুমাত্র নামের বৈচিত্র ছাড়া তাদের কর্মকান্ড ও রাজনীতি শিক্ষার ক্ষেত্রে তেমন কোন পার্থক্য নেই। আসলে এদের রাজনীতি শিক্ষার ক্ষেত্রটা কোথায় বা তার পাঠ্যসূচীই বা কি ( মূর্খ আমি!!! ) আজও বুঝে উঠতে পারিনি। তবে অবস্থাদৃস্টে মনে হয়েছে দুপক্ষই ইতিহাস বিশ্লেষন করেন বা তাদেরকে দিয়ে করানো হয় অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে। বুটক্যাম্পে নিয়মিত গালিগালাজ, অশ্লীলতা, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, অস্ত্রবাজী ও খুনের শিক্ষা চলে।
যিনি মার্কস-লেনিন হজম করে শিল্প,সংস্কৃতি ও সচেতনতার গামছা গলায় দিয়ে ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থের সুপ্ত বাসনায় হিপোক্রেসির চর্চা করছেন তিনিই বা কি করে রাজনৈতিক বোদ্ধা ? অথবা এখানে রাজনীতিটা কোথায় ?
যারা ধর্মের আলোকে নিজেকে উজ্জীবিত না করে সংকীর্ণতাকে ঘৃণ্য ও অমানবিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে রাজনীতি কোথায় ?
অপসংস্কৃতি,অশ্লীলতা, অরাজকতা, হত্যা, গুম, মিথ্যাচার কি রাজনীতি, নাকি পারিবারিক ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে ধরে রাখবার জন্য গলা ফাটিয়ে দলে নিজের অবস্থানকে জানান দেয়াটা রাজনীতি ? নাকি মৌলিকতাকে ভুলে গিয়ে, বিচার নামক প্রহসনকে বজায় রেখে, শ্রমিক আর আম জনতার রক্তে রন্জিত হয়ে অপ্রাসংগিক ও আপাতঃ দৃস্টিতে অপ্রয়োজনীয় ইতিহাস নিয়ে মাতামাতি করাটা রাজনীতি? কিংবা স্বার্থপর দলীকরনই শুধুমাত্র রাজনীতি ?
যেটাই হোক বা যাই আপনারা বুঝুন না কেন,রাজনীতি বলতে আমরা বাংলাদেশীরা কিন্তু রাজার নীতিকেই বুঝি। তাই কেবলি রাজপুত্র ও কন্যাদের দ্বারা দূর্গের নিয়ন্ত্রন ও তাদের ব্যক্তিগত জীবনাচারন সমৃদ্ধ ইতিহাসের বলয়ে আবদ্ধ থাকতে পছন্দ করি। মহারাজার সন্তুস্টির জন্য নিজের ঘর ঠিক না রেখে, অন্নের সংস্থান ভুলে গিয়ে কেবল রাজার গোলাকেই সমৃদ্ধ করে চলছি।
এই সব মোসাহেবী আর স্বার্থপরতা আমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে যে আসলে রাজনীতি মানে রাজার নীতি নয়। রাজনীতি রাস্টের জন্য জাতীয় স্বার্থরক্ষার নীতি। আর সে কারনেই আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে কে বা কারা ও কি উদ্দেশ্যে এই নীতিকে ব্যবহার করছে। এ সবের বাইরে গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত রয়েছে আন্তর্জাতিক কূটণীতি ও পার্শ্ববর্তী দেশের ঘৃণ্য রাজনৈতিক দাবার চাল।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকারকে নিশ্চিত করে, সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশে স্থিতিশীল রাজনীতি ও উন্নয়নমূলক অর্থনৈতিক অবকাঠামো প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে স্বাধীনতাত্তোর প্রতিটি ক্ষমতাশীল দলই। ঠিক তেমনি ভাবে রাস্ট্রের নাগরিক হিসেবে আম জনতা ব্যর্থ হয়েছে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে। এ ভুল যেমন আম জনতা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের। ঠিক তেমনি ভাবে এর দায় ভার গ্রহন করে পরিবর্তনও আমাদেরকেই আনতে হবে।
আজ সময় এসেছে ভুল শুধরাবার। অন্ধ, স্বার্থপর আর লোভীর মত দলের তোষামোদী নয়, মৌলিক চাহিদার দাবীতে সুষ্ঠু সমাজ ও সার্বভৌমত্ব বজায়ের স্বার্থে দেশের কল্যানে এগিয়ে আসুন। রাজপুত্র-কন্যা গন নয়, জনমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দেশপ্রেমী নেতৃত্ব তৈরী করুন।