আবদুল আউয়াল ঠাকুর : পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে লং মার্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিস্তার পানি আমাদের অধিকার। এই অধিকার আমাদের আদায় করতে হবে। লংমার্চের শেষে বলেছেন, পানি না দিলে ভারতের সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকার ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়নি। যেনতেন একটা চুক্তি করতে চেয়েছিল সেটাও সম্ভব হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি করা সম্ভব নয়। দিল্লি দোষ চাপাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, উজান থেকে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে, ফলে পশ্চিমবঙ্গ তিস্তা থেকে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না। যৌক্তিকভাবেই একথা বলা চলে যে, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়ার ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদি আন্তরিক হতো তাহলে রাজ্য সরকার বাধা হতে পারত না। তিস্তা এখন মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এর কোনো কোনো জায়গা ২০০ থেকে ৫০০ গজে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। তিস্তার কারণে বাংলাদেশে ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলার বলে মনে করা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই গ্যারান্টি ক্লজবিহীন ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়ার কারণে পদ্মানির্ভর নদ-নদী ইতোমধ্যেই শুকিয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে সারাদেশে পানির হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। এই বাস্তবতায় বিএনপির লংমার্চ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ভারত বিরোধিতার জন্যই বৈশাখের খরতাপের সময় লংমার্চ বেছে নিয়েছে বিএনপি। এটা তাদের আন্দোলন নয়, অপরাজনীতি। তিনি মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে সমস্যা সমাধানে সরকারকে বিএনপির সহযোগিতা করা উচিত। এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সহযোগিতা বলতে প্রকৃতই কি বোঝায়? জাতীয় স্বার্থ বিনষ্টকারী আঁতাতের বিরোধিতা, না তাকে সমর্থন করা। প্রসঙ্গটি রাজনৈতিক অঙ্গনেও এখন আলোচিত হচ্ছে।
বিএনপি জোট যখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সরকারের সাথে জামায়াতে ইসলামীর গোপন আঁতাতের সম্ভাবনার খবর দিয়েছে দৈনিক আমার দেশ অনলাইন। ওই খবরে অতীতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উক্তি। তিনি নিউইয়র্কে বলেছেন, আগামী দু’চার বছরে নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হতে কমপক্ষে ২০ বছর সময় লাগবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ৭০ বছর আগে সংঘটিত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এখনো মাঝে মধ্যে এই যুদ্ধের বিচারের ট্রায়াল হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে নানা প্রশ্ন অনেকদিনের পুরনো। জামায়াত বিএনপির বোঝা না শক্তি এ নিয়েও নানা বিশ্লেষণ রয়েছে। এ আলোচনা আরো তুঙ্গে উঠেছে মার্চ ফর ডেমোক্রেসির চূড়ান্ত সফলতা অর্জিত না হওয়ার মধ্য দিয়ে। সফলতা অর্জিত না হওয়ার বিষয়ে পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করছে। প্রকাশ্য না হলেও এ কথা সবারই জানা, জামায়াত মনে করে বিএনপির ঢাকা কমিটির ব্যর্থতা, অক্ষমতা অথবা আপসকামিতার কারণেই হয়তো মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কাক্সিক্ষত চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করতে পারেনি। বিপক্ষ চুক্তি হচ্ছে, আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে জামায়াত নির্ভরতার কারণে ওই আন্দোলনের গণপ্রকৃতি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এক ধরনের সহিংস আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে যাওয়ায় এবং প্রতিপক্ষ অধিকতর হিং¯্ররূপ ধারণ করায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন তার প্রকৃতি হারিয়ে ফেলেছে। আর সে কারণেই শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষে নির্বাচন করিয়ে নেয়া সম্ভবপর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, কর্মসূচি প্রণয়নকারী কারো কারো সাথে সরকার বা অন্য কোনো মহলের সম্পৃক্ততার কারণে শেষ পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচিও সরকারের অনুকূলেই গিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ওই আন্দোলনের কারণে রাজধানী সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সরকারের নিয়ন্ত্রণ কার্যত রাজধানী ছাড়া অন্য কোথাও ছিল না। নির্বাচনের নামে যা হয়েছে তাকে নির্বাচন নয় বরং মনোনয়ন বলাই উত্তম। বেগম খালেদা জিয়া অবশ্য মনে করেন, আন্দোলন সফল হয়েছে। এদিকে ভারতীয় সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন রয়েছে এবং তারা খুব শিগগিরই নতুন জাতীয় নির্বাচন দেবে এমন কোনো কথা ভাবছে বলে মনে হচ্ছে না। নির্বাচন-পরবর্তীকালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় নতুন করে চূড়ান্ত রায় প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে উচ্চতর আদালত। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তাকে না শুনিয়ে জিয়া অরফানেজ মামলায় অজামিনযোগ্য ও আপসের অযোগ্য ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়কে কেন্দ্র সারাদেশে নতুন করে কঠোর নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
১৮ দলীয় জোটের স্টিয়ারিং কমিটির সভার উদ্ধৃতি দিয়ে এক খবরে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া নাকি ওই সভায় জামায়াতের প্রতিনিধির কাছে জানতে চেয়েছেন, তারা জোটে আছেন, কি নেই? জবাবে জামায়াত নেতা বলেছেন, তারা জোটে আছেন। প্রাসঙ্গিক খবরে আরো বলা হয়েছে, জিয়ার জন্মস্থান বগুড়ায় উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি নাকি বেগম জিয়া সহজভাবে নেননি। জামায়াতের সাথে বেগম জিয়ার এই আলোচনা বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের দায়িত্বশীল মহল কর্তৃক সমর্থিত হয়নি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, উপজেলা নির্বাচনে সমন্বয়হীনতার প্রসঙ্গ এখনো নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। এর বাইরে একথাও সত্যি যে, উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কার্যত একদিকে যেমনি সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় আন্তরিকতাহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তেমনি সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনীতির জনপ্রিয়তাও প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি জোটের রাজনীতির প্রাসঙ্গিক খবরাদিতে বলা হয়েছে, জামায়াত দ্রুত আন্দোলন চাইলেও বিএনপি নাকি আরো একটু সময় দিতে চাচ্ছে। এদিকে তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যার দাবিকে কার্যত বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। নতুন কর্মসূচীও দেয়া হয়েছে। আন্দোলনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে বলতে হবে, বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতেই অটল রয়েছে। আন্দোলন ও জোটের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে একথাই বলতে হবে, আন্দোলন চলছে দেশ রক্ষার। জোট এই প্রতিজ্ঞায় অটল। অর্থাৎ জোটভুক্ত প্রতিটি দলেরই যেমন নিজস্ব কর্মসূচি রয়েছে, তেমন ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিও রয়েছে। মূলত, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই জোট গঠিত হয়েছে তবে এখন মৌলিক কিছু লক্ষ্য এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি যেভাবেই বলা যাক না কেন মূল বিষয় হচ্ছে- দেশকে আধিপত্যবাদের আগ্রাসনের হুমকি থেকে মুক্ত রাখা। গত নির্বাচনে সরকারের প্রতি ভারতীয় সমর্থনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচনের পক্ষে নয়। কেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মূল্যায়নে অবশ্যই বলা দরকার, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ বা তার মিত্রদের সরকার গঠনের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। মাঠের উত্তাপ আঁচ করে কৌশল নির্ধারণের মধ্য দিয়ে মূলত ভারত আন্তর্জাতিক কোনো কোনো মহলকে সম্মত করিয়ে নির্বাচনটি সরকারের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করেছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনপূর্ব প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের বিবেচনায় ভারতীয়রা হয়তো এই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছিল যে, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি, তার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জোটকে ক্ষমতার বৃত্ত বলয় থেকে সরিয়ে রাখা দরকার। অর্থাৎ এই জোট ক্ষমতায় আসুক সেটা ভারত চায়নি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই স্বাধীন রাষ্ট্রে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পারস্পরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই তিনি বাংলাদেশের যে ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন সেটা মূলত ভারতীয় নেতাদের কখনই পছন্দনীয় ছিল না। সে কারণেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই কংগ্রেসের নীতি অনেকটাই বিএনপিবিরোধী রূপ নিয়েছিল। অন্যদিকে কংগ্রেসের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের বিষয়টিও নতুন কিছু নয়। সেই বিবেচনায় ভারতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং লাভবান হওয়ার বিবেচনায় সরকারের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার বিষয়টিকে বিশেষভাবে না দেখার কোনো সুযোগ নেই। জামায়াতে ইসলামিকে নিয়ে ভারতের সাথে মার্কিন সম্পর্কের টানাপড়েন হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে জামায়াতকে একটি অসন্ত্রাসী দল হিসেবে বিবেচনা করে, ভারত সেখানে জামায়াতে ইসলামীকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে বিবেচনা করে। গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতির মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, দু’ দেশের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ যাই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণের বিবেচনায় এটা স্পষ্ট যে, বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলীয় জোটকে সামগ্রিকভাবেই ভারতের বর্তমান সরকার সহ্য করছে না। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে জোটের প্রসঙ্গ আলোচনা করলে বলা যায়, সমুদ্রে প্রতিটি নদী তার আলাদা বৈশিষ্ট্য রেখেই যেভাবে লীন হয়ে যাচ্ছে ১৮ দলীয় জোটও ঠিক তেমনটাই। প্রতিটি দলের নিজস্ব চরিত্র, বৈশিষ্ট্য এমনকি দৃষ্টিভঙ্গী থাকা সত্ত্বেও একটি বড় বাঁধনে তারা নিজেদের আটকে রেখেছে। একথা অবশ্যই বলা দরকার যে, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের টানাপোড়ন নেই সেকথা সত্য নয়। যেমন- বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতিনিধিত্বকারী সাংবাদিক ইউনিয়নে জামায়াতের আধিপত্য থাকার কারণে এখানে বিএনপি অংশ মূলত কখনোই ক্ষমতায় আসতে পারছে না। আবার সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদেও দুটি কমিটি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোতে জোটের সবাই মিলে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সরকারের সাথে জামায়াতে ইসলামীর আঁতাতের যে আলোচনা উঠেছে তা যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে সরকারকেই তার ঘোষিত কর্মসূচি থেকে সরে আসতে হবে। প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনায় এটা বলা যায়, স্বাধীনতার পর একই ধরনের মামলায় কুষ্টিয়ার চিকন আলীর ফাঁসি হওয়ার পর সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। সে বিবেচনায় বলা যায়, শাহবাগীদের দাবির সূত্র ধরে আইন সংশোধন করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সরকারের কমিটমেন্ট কি পূর্ণ হয়ে গেছে? এ রকম যদি হয় তাহলে ভিন্ন কথা। বাস্তবতা হলো, জামায়াতে ইসলামীর বিচারাধীন নেতাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এই রায় ঘোষণার প্রক্রিয়ায় কি কোনো আপস ফর্মুলা কাজ করছে? মৌলিক প্রশ্নের সমাধান অনুমানভিত্তিক দেয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই যে সব আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেগুলো হলো, শাহবাগী মঞ্চ ভেঙে গেছে, সরকার পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্যের খবর ইতোমধ্যেই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একে যদি নতুন কোন পোলারাইজেশনের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করতে হয়, তাহলে বলতে হবে বিষয়টি সরকারের অভ্যন্তরে ঘটেছে। অন্যভাবে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামীতে সংগঠনগতভাবে দু’ধরনের মত অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। তবে, তা কোনো চূড়ান্ত রূপ নিতে পারেনি বরং দুই পক্ষই সরকারের গ্রেফতারের আওতার মধ্যে রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষিত যদি বিবেচনায় আনতে হয় আর তার সূত্র ধরে যদি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে তথ্য-উপাত্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হয় তবে সে ক্ষেত্রেও ভাববার এবং দেখবার রয়েছে, আগামী দু’চার বছরে নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে যদি কমপক্ষে ২০ বছর সময় লাগে তার অর্থ কি? আগামী ২০ বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কি ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে? পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে দেখলে বলা যায়, ’৯০-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিন জোট লিঁয়াজো কমিটির মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনা করেছে। ’৮৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে। ’৯৬-এর নির্বাচনে জামায়াত আলাদা থাকলেও কার্যত বিএনপিবিরোধী অবস্থানের ফলে এর সুফল আওয়ামী লীগ ভোগ করেছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ইসলামী মূল্যবোধ ও বহুদলীয় গণতান্ত্রিক চর্চায় অটল রয়েছে। ইস্যুভিত্তিক ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার গঠন করেছে এবং সেই থেকে এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধই রয়েছে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদির মামলায় ইতোপূর্বেকার ঘোষিত রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে যে সহিংস কর্মসূচি পালন করেছে তারচেয়েও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। উপরে উপরে সরকার যাই বলুক না কেন, পায়ের নিচে যে মাটি নেই সে কথা বোধহয় সরকারের চেয়ে অন্য কারো বেশি জানা নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে জনগণ আরো বেশি সোচ্চার ও দুর্বার হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত গুম-অপহরণের মতো বিষয়গুলোতেও জনগণের প্রতিরোধের মুখে সংশ্লিষ্টদের পিছু হটতে হচ্ছে। নিখোঁজ করার পরিবর্তে অপহৃতদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এটা বোঝা যায়, সরকারের অবস্থান আগের জায়গায় না থাকার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও সরকারকে অবশ্যই নতুন করে ভাবতে হবে। সেই ভাবনার ক্ষেত্রে কার ভাগে কতখানি পড়বে সেটা অবশ্যই দেখার বিষয় রয়েছে। এক্ষেত্রে এটাও ভাববার রয়েছে যে, ভারতের যে কংগ্রেস সরকারের ওপর বাংলাদেশের সরকার ভর করে আছে ভারতের নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সরকার কার সাথে আপস করবে, কার সহযোগিতা কি জন্য নেবে, কে সহযোগিতা করবে অথবা কোন ভিত্তিতে আপস করবে- এসব আলোচনা হয়তো এখন পূর্ণ প্রাসঙ্গিক ন
াও হতে পারে।
জোট মূলত নির্বাচনভিত্তিক। ২০০৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি বা হতে পারেনি। সুতরাং নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় এলে হয়তো বলা যাবে বর্তমান রাজনীতির যে ধারা রয়েছে, তা বহাল থাকবে কিনা। বিএনপি-জামায়াত যে ধরনের জোট রয়েছে সেই ধরনের জোট থাকবে, নাকি জামায়াতে ইসলামী নতুন কোনো জোট তৈরি করবে? আবার অন্যভাবে আওয়ামী লীগ যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে, নাকি নতুন কোনো প্রক্রিয়ায় যাবে- এসব আলোচনা এখনো ঠিক স্থান করে নিয়েছে এমনটা মনে করার বোধহয় কোনো কারণ নেই। বানে-বন্যায় মানুষ ও বিষধর সাপও একত্রে থাকে। এটি যেমনি বাস্তব, তেমনি চূড়ান্ত বিবেচনায় বাস্তব নয়। গ্রামে ডাকাত পড়লে কারোই হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। বাংলাদেশের এখন যে বাস্তবতা তাতে নানা বিবেচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে বিদেশীদের বিতর্কিত অবস্থান সম্পর্কে বিশিষ্টজন এবং কোনো কোনো মহল থেকে স্পষ্ট উচ্চারণের পরও ভারত বা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সুস্পষ্ট বিবৃতি পাওয়া যায়নি। ভোট দানের মতো মৌলিক অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হয়েছে। নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন রেখা স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। হত্যা, অপহরণ, গ্রেফতার সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং সেই পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক প্রসঙ্গ হচ্ছে, দেশ রক্ষা করা যাবে কি না এবং নির্বাচনকালীন গ্রহণযোগ্য কোনো সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে কিনা। চূড়ান্ত বিবেচনায় বলা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- জনগণ। বর্তমান সময়ে জনগণ সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। সুতরাং যারা জনগণের অনুবর্তী থাকবে তারাই টিকবে, যারা বিপরীতে যাবে তারা চোরাগলিতে হারিয়ে যাবে।
awalthakur@gmail.com
Next Post