অপহরণ, খুন ও গুম শব্দের সাথে আমরা সবাই ব্যাপকভাবে পরিচিত। বাংলাদেশে এই তিনটি অপরাধ যেভাবে বেড়েছে তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে অপহরণের পর সাত জনকে খুন করার ঘটনায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন।
তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে সরকার যাদের বেতন দিয়ে পোষে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে এবং এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে নিয়মিতই বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। শুধু র্যাব নয়, পুলিশের দিকেও অভিযোগের আঙুল রয়েছে। তারা হরহামেশাই বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
তবে তার কতটুকু সত্য। র্যাব কি তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করছে, না সংবিধানবিরোধী কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এসব বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে কথা বলেছেন, মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না।
অনুষ্ঠানে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, গত ২০০৪ সালে র্যাব গঠিত হওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ পাওয়া গেছে সেটি খুবই পরিতাপের বিষয়। সরকার এটি তদন্ত করে দেখবে। যদি তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দেবে সরকার।
তিনি বলেন, র্যাব যখন সৃষ্টি হয়েছিলো তখনকার সময়ের চেয়ে বর্তমানে অপরাধ প্রবণতার কৌশলও বেড়েছে। বেড়েছে র্যাবের কার্যপরিধিও। তবে র্যাব যদি তাদের এই কাজ করতে গিয়ে অন্যায় করে থাকে এবং এর পেছনে যদি কোনো রাজনীতিবীদও জড়িত থাকেন তাহলে তাদেরও শাস্তি হওয়া দরকার।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেটি ভিন্ন। এমন আর কতদিন।
তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা র্যাব বৈধ বলে দাবি করছে। তবে তা কোন আইনের বলে বৈধ সে বিষয়টি তাদের জনগণের সামনে পরিষ্কার করা দরকার।
সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের দেশে বিচার বিভাগ আছে। সব অপরাধীদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে এনে তাদের শাস্তি দিতে হবে। অপরাধী যত বড়ই হোকনা কেন তাকে বিচারের আওতায় আনার আগে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার মত ঘটনা কোনো সভ্য দেশেই ঘটতে পারেনা।
তিনি মনে করেন, এখন র্যাব বা পুলিশ পরিচয়ে যে অপহরণের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে র্যাব এ ধরনের কাজে জড়িত বলেই।
অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, র্যাব প্রতিনিয়ত একই কথা বলে যাচ্ছে, তারা কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গিকে ধরছে। রাত আড়াইটার দিকে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার কাজে বের হচ্ছে। পথে ওই সন্ত্রাসীর সহযোগীদের সাথে গোলাগুলি হচ্ছে এবং ওই গোলাগুলিতে ওই সন্ত্রাসী মারা যাচ্ছে।
একই ঘটনা আর কতদিন ঘটবে। তারা কোন আইনের বলে এসব কাজ করছে। তাদের তো বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। আমরা তো কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। তবে র্যাব বা পুলিশকে যদি অঘোষিতভাবে অন্য কেউ এসব অপরাধ করার নির্দেশ দেয় তবে সেদিকটাও বিচারের আওতায় আনা উচিৎ।
তিনি মনে করেন, অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারে একমাত্র আদালত। তাই ছাড়া যদি কেউ এ বিষয়টি তাদের হাতে তুলে নেয় তাহলে সেটি হবে আইন বহির্ভূত।
Next Post