ধর্মঘটে অচল ঢাকা মেডিকেল কলেজ, রোগীদের দুর্ভোগ

0

dhaka_medical_college3-311x186ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটে আবারো অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এতে চিকিৎসা না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীরা।

যতই গুরুতর হোক না কেন কোন রোগীকেই হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। এমনকি এ্যাম্বুলেন্সে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুমুর্ষ অবস্থার রোগীদেরও ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোববার দুপুর ১২ টা থেকে ৪৮ ঘন্টা এই ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

এর আগে শনিবার রাত ৯ টার দিকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলের একটি খাবার হোটেলে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার মমিনুল ইসলাম ও একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই ঢামেক চিকিৎসকরা জড়ো হন। তারা হামলার সাথে জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবিতে হাসপাতালের ভেতরই বিক্ষোভ মিছিল করেন।

রাত পৌনে ১টার দিকে ইন্টার্ন ও অনারেবল চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজসহ ১৫/১৬ জনকে আসামী করে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে।

এর আগে গত ৬ তারিখ মঙ্গলবার শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্যদের সাথে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখনও চিকিৎসকরা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে।

রোববার সকালে বর্হিবিভাগে কর্মচারীরা যথারীতি কাজে যোগ দেন। ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে থাকেন রোগীরা। হঠাৎ করে সকাল ৯ টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। তারা মিছিল সহকারে এসে সকল টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে দেন। চিকিৎসকদের প্রতিটি রুমে নিজস্ব তালা ঝুলিয়ে দেন। আর ডাক্তার দেখানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে থাকেন হাজার হাজার রোগী।

বর্হিবিভাগের এক কর্মচারী জানান, বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার রোগী ডাক্তার দেখান। রোববারও রোগীরা এসেছিলেন। কাউন্টারগুলো থেকে সবে মাত্র ২/৩ শত টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। রোগীরা টিকিট নিয়ে ডাক্তারের অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় চিকিৎসকদের একটি দল হামলা চালায়। তারা টিকিট কাউন্টার ও ডাক্তারদের চেম্বারে নিজস্ব তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে ডাক্তার না দেখিয়ে রোগীরা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এদিকে জরুরি বিভাগেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে কোন রোগীকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, অপারেশন থিয়েটারগুলোতেও অভিযান চালিয়ে বন্ধ দেয় সিডিউল অপারেশন। হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, সব মিলিয়ে বিভিন্ন বিভাগে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক অপারেশন হয়ে থাকে। কিন্তু গতকাল ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বিক্ষোভ সহকারে অপারেশন থিয়েটারগুলোতে অভিযান চালায়। তারা সব ধরনের অপারেশন কার্যক্রম করে বন্ধ করে দেন।

সুত্র জানায়, ইমার্জেন্সী বিভাগে প্রতিদিন এক থেকে দেড় শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু গতকাল ভোরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পৌঁছার আগে ২৪ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এরপর আর কোনো রোগী ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।

উত্তরা থেকে প্রসুতি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা হালিমা বেগমের স্বামী আলমগীর হোসেন অভিযোগ করেন বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবাকারী প্রতিষ্ঠান। অল্প খরচে উন্নত সেবা পাওয়ার জন্য দেশের দুর-দুান্ত থেকে হাজার হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকরা যদি প্রায় এভাবে চিকিৎসা না দিয়ে ধর্মঘরে করে এই বৃহত প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রাখে তাহলে মানুষ বাঁচবে কী করে।”

তিনি বলেন, “বিভিন্ন হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একের পর এক ধর্মঘটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অথচ সরকার এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ১১ টায় হাসপাতালের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক, কলেজ প্রিন্সিপাল, বিএমএ মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা।

প্রায় ৩ ঘন্টা বৈঠক শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের মেডিকেল অফিসার হোসাইন ইমাম সাংবাদিকদের জানান, আগামী ৪৮ ঘন্টা তাদের কর্মবিরতি বা ধর্মঘট চলতে থাকবে। এর মধ্যে হামলাকারীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More