প্রজন্মের সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে ইতিমধ্যেই স্থান করে নিয়েছে ‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ড। শ্রোতার হৃদয় ও ঠোঁটে শিরোনামহীন’র যে ক’টি জনপ্রিয় গান জায়গা করে নিয়েছে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-‘একা পাখি’, ‘ক্যাফেটেরিয়া’, ‘বন্ধ জানালা’, ‘হাসিমুখ’সহ বেশকিছু গান।
এই সময়ে ব্যান্ড দলটির প্রত্যেক সদস্য দারুণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাদের এ ব্যস্ততা অবশ্যই প্রিয় শ্রোতাদের জন্য। নিজেদের প্রকাশিত সর্বশেষ অ্যালবাম ‘শিরোনামহীন’র গানগুলো শ্রোতাদের নিকট খুব সহজে পৌঁছানোর জন্য দলের অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) তৈরি করেছেন তারা। বুধবার থেকে এ সুবিধা ভোগ করছেন শিরোনামহীন’র ভক্তরা।
এই অ্যাপে গানের পাশাপাশি থাকছে দলের সব তথ্য, সদস্যদের পরিচয়, গানের গল্পসহ নানাকিছু।
শ্রোতাদের জন্য দলের সার্বিক ব্যস্ততা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মিরপুর রূপনগরে বাংলানিউজের সঙ্গে জম্পেশ আড্ডায় কথা বলেছেন শিরোনামহীনের পাঁচ চেনা মুখ- গিটারিস্ট দিয়াত খান, কি-বোর্ডিস্ট রাসেল কবির, ড্রামার কাজী শাফিন আহমেদ, বেইজিস্ট জিয়াউর রহমান ও ভোকাল তুহিন।
আড্ডার প্রথমেই চলে ক্লিক ক্লিক পর্ব। গল্পে গল্পে ফটোসেশন পর্ব শেষ করার পর কথা বলেন বেইজিস্ট জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, শ্রোতাদের জন্য আমরা তৈরি করেছি নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ)। বুধবার থেকে এ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছেন আমাদের শ্রোতারা। এখানে যুক্ত হয়েছে সর্বশেষ অ্যালবাম ‘শিরোনামহীন’র সবক’টি গান। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে যে কেউ এই অ্যাপ নামিয়ে নিতে পারবেন। এজন্য আলাদা কোনো প্লেয়ারের প্রয়োজন নেই। একদম বিনামূল্যে শোনা যাবে গানগুলো। শ্রোতারা ইচ্ছেমত অডিও প্লেয়ার’র মত প্লে, পজ করে শুনতে পারবেন।
অ্যাপটি play.google.com‘র সার্চবারে ‘শিরোনামহীন’ লিখলেই পাওয়া যাবে। গানের পাশাপাশি এতে থাকছে সব তথ্য এবং সদস্যদের কথাসহ বিভিন্ন ছবি। এ ক্ষেত্রে মুঠোফোন ব্যবহারকারী অ্যাপ নামানোর পর নেট সংযোগ না থাকলেও যে কোনো সময় গান শুনতে পারবেন।
নতুন এ অ্যালবাম থেকে চারটি বাছাইকৃত গান মিউজিক ভিডিও আকারে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিরোনামহীন। সে ক্ষেত্রে মিউজিক ভিডিওগুলোও পাওয়া যাবে অ্যাপে।
ভোকাল তুহিন বলেন, আমরা এ অ্যালবামের রোদ ক্যানভাস, আহত কিছু গল্প, বৃষ্টিকাব্য গানগুলো ভিজ্যুয়াল আর্ট আকারে মিউজিক ভিডিওতে উপস্থাপন করতে চাই। সেটা হবে কাহিনীনির্ভর এবং এখানে কিছু স্টিল ছবি ব্যবহার করা হবে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর’র মধ্যে এর কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।
১৯৯৬ সালে জিয়ার চেষ্টায় গড়া এই দলটির সঙ্গে ২০০০ সালে যুক্ত হন তুহিন। এরপর শাফিন ও ২০০৯ সালে দিয়াত ও ২০১০ সালের জুনে সর্বশেষ যোগ দেন রাসেল।
দলের যাত্রা প্রসঙ্গে জিয়া বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই প্রচুর গান শুনতাম। মনে আছে, আমি পড়াবস্থায় নটরডেম কলেজে সেসময় মোট পাঁচজন মেটালিক গান শুনতেন। আর রেইনবোতে গিয়ে আমি বিভিন্ন ব্যান্ডের ভিডিও গানগুলো দেখার জন্য ভিসিপি’র ক্যাসেট সংগ্রহ করতাম। এরপর তো ধীরে ধীরে ব্যান্ডের চিন্তা মাথায় আসল। এক এক করে বুয়েটের ক্যাম্পাসে খুঁজে বের করেছি দলের সদস্যদের।
দলের আরেক সদস্য শাফিন শুরু থেকেই মিউজিক নিয়ে বেশ সিরিয়াস। গানের তালে তালে চমৎকার ড্রাম বাজিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করছেন প্রতিটি শোতে।
নতুন অ্যালবাম নিয়ে শাফিন বলেন, আমরা আমাদের নতুন গানগুলো শ্রোতাদের কানে পৌঁছাতে চাই। কারণ গত তিন বছর আমরা কী ধরনের গান তৈরি করেছি, এটা শ্রোতারা যদি না শুনে তাহলে কীভাবে বুঝবে। সমালোচনা শুনতে আমরা রাজি, তবে আমাদের গানগুলো প্রথমে সবাইকে মন দিয়ে শুনতে বলবো।
ব্যান্ড ‘আরবান ফিকশন’ থেকে আসা গিটারিস্ট দিয়াত খান প্রায় পাঁচ বছর ধরে শিরোনামহীন’র সঙ্গে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে একটা প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন জিয়া ভাই। মূলত সেখান থেকেই তার সঙ্গে আমার পরিচয় এবং শেষে এ দলের সঙ্গে কাজের সুযোগ। এরপর তো এখন পর্যন্ত বাজিয়ে যাচ্ছি।
ভবিষ্যতে শিরোনামহীন’র সব অ্যালবাম অ্যাপে পাওয়া যাবে বলে জানায় দলটি।
বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশকিছু স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। নতুন গানগুলোকে পৃথকভাবে মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে প্রকাশ করেছেন তারা। কারণ অ্যাপ্লিকেশনের সাইজ বেড়ে যাওয়ার কারণে গান আলাদাভাবে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য আএসও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হচ্ছে।
আড্ডার শেষ দিকে কথা বলেন কি-বোর্ডিস্ট রাসেল কবির ও তুহিন।
তারা জানান, এখন আর সিডি কিনে কেউ অ্যালবাম শুনছে না। একটা সময় সিডি ইতিহাসই হয়ে যাবে। এখন মোবাইলের দোকানে গিয়ে নানা সাইটে ক্লিক করে ডাউনলোড করে ফ্রি গান শুনছে এবং অন্যদের মোবাইলে গানগুলো খুব সহজেই ট্র্যান্সফার করছে। ওই ক্লিকটাই বড় সর্বনাশ করছে।
তারা আরো বলেন, আমাদের অ্যালবামে ফ্রি গান শুনতে পারলেও শিরোনামহীনই দেশের প্রথম ব্যান্ড যারা অ্যাপ নিয়ে এসেছে শ্রোতাদের জন্য। খুব সহজে শ্রোতারা আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করে গান শুনতে পাবেন এবং আমাদের সর্ম্পকে জানতে পারবেন। আর এ গানগুলো শ্রোতাদের কানে খুব সহজে পৌছুক এটাই আমাদের চাওয়া।