ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে নতুন চা বাগান গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ১২০ একর জমিতে চা বাগান গড়ে ওঠায় আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। চা বাগানে বেকার নারি-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল নামে খ্যাত পঞ্চগড় জেলার পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় চা চাষে ুদ্র কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এক সময়ে গোচারণভূমি বা পতিত জমিগুলো এখন দিগন্তজোড়া সবুজ পাতায় ভরে গেছে । রায়মহল নিটোল ডোবা ৪৫ একর ও পাড়িয়া ৩৫ একর এবং ুদ্র প্রান্তিক চাষিদের ৪০ একরসহ ১২০ একর জমিতে চা বাগান গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট জেলায় চা চাষের জন্য উপযোগী জমি রয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার একর। সেখানে আবাদ হয়েছে মাত্র তিন হাজার একর জমিতে। ২০০০ সালে উত্তর জনপদের সীমান্তঘেঁষা জেলা পঞ্চগড় সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। ঠাকুরগাঁও জেলায় ২৫ হাজার একর জমিতে উন্নত জাতের চা চাষ সম্ভব।
১৯৯৯ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ চা বোর্ডের একটি প্রতিনিধিদল পঞ্চগড়সহ উত্তরের কিছু অংশ পরীা শেষে জানায়, এ অঞ্চলের মাটি বেলে ও দো-আঁশ আকৃতির। যে মাটিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না ওসব জমিতে চা চাষ করা সম্ভব। এ খবর পেয়ে ২০০০ সালে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি ও কাজী অ্যান্ড টি এস্টেটসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান চা চাষ শুরু করে। পরের বছরেই তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিচ্ছিন্ন গোচারণভূমি চায়ের সবুজ পাতায় ভরে যায়। জাগে সবুজের সমারোহ। চা বোর্ডের পরামর্শ ও কারিগরি বোর্ডের সহয়তায় এলাকার ুদ্র চাষিরা এগিয়ে আসেন। বাগান মালিকদের পাশাপাশি তারাও চাষ করেন চা। এতে নীরবে ঘটে চা চাষের বিপ্লব। এ ২০টি টি এস্টেটের মধ্যে চা বোর্ডের নিবন্ধন পেয়েছে ৯টি। চলতি বছরের মার্চ থেকে চা পাতা চয়ন করা হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গ্রিন ফিল্ডে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট ৮০০০ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর পাড়িয়া রংবাগ ইসলাম টি এস্টেট লিমিটেড মালিক এমপি দবিরুল ইসলামের ৪৭০ বিঘা জমির ওপর চা বাগানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ৯ মাস আগে ১০০ বিঘা জমিতে চা চারা রোপণ করেছেন। এ নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলায় এক লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হবে বলে আশা হচ্ছে। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিটোলডোবা গ্রামের ২৫ একর জমিতে ২০০৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দীন আহমেদের পুত্রবধূ কানিজ ফাতেমা একটি চা বাগান গড়ে তোলেন। পরে গ্রিন ফিল্ড নামে একটি টি এস্টেট ক্রয় করেন তিনি।
গত বছর ঠাকুরগাঁও থেকে এক লাখ কেজি চা পাতা পঞ্চগড়ে করতোয়া টি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। পরে ওই বাগানে ২০ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণ করা হয়। নিটোলডোবা গ্রামের ৩৩ জন কৃষক ৪০ একর জমিতে ুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে মহসিন আলী এক একর, ডা: নিরেন চন্দ্র পাঁচ একর, মকবুল হোসেন এক বিঘা, দবিরুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে চায়ের আবাদ শুরু করেছেন।
নিরেন চন্দ্র জানান, আগে আমরা অন্য ফসল করতাম ভালো আবাদ হতো না। গ্রিন ফিল্ডের সহযোগিতা পেয়ে আমরা স্বল্প পরিসরে চা চাষ শুরু করেছি। লাভজনক হলে ভবিষ্যতে আবাদ আরো বৃদ্ধি করা হবে। এ বছর আরো ৫০ একর জমিতে চা চাষের জন্য কৃষকদের গ্রিন ফিল্ড সুদবিহীন ৪০ জন কৃষককে চায়ের চারা দেবে। গ্রিন ফিল্ডের ম্যানেজার মো: ইব্রাহিম খলিল জানান, এ এলাকায় চা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চা চাষ বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় কৃষকদের উৎসাহিত করে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হয়। ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মো: দবিরুল ইসলাম জানান, ৪৭০ বিঘা জমিতে পর্যায়ক্রমে চা বাগান করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১০০ বিঘা জমিতে প্রতি বছর চা চারা রোপণ করা হবে।
এ ছাড়াও ঠাকুরগাঁও জেলায় চা ফ্যাক্টরি না থাকায় কৃষকেরা চা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন না। সরকারের উচিত অবহেলিত পড়ে থাকা জমিগুলোকে চা উৎপাদনের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ মাঠকে কাজে লাগানো। নারীদের কোমল হাত দিয়ে তোলা দু’টি পাতা একটি কুঁড়িÑ বিশেষ করে দরিদ্র ও বঞ্চিত নারীদের দু’বেলা ভাতের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এলাকায় কৃষকেরা ুদ্র ুদ্র চা বাগান গড়ে তুলছেন, যা প্রান্তিক চাষিদের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। চা বাগান এক নজরে দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ছুটে আসছে নিটোলডোবা চা বাগানে। চা বাগানের পশ্চিম পাশে ৫০০ গজ দূরে ভারতের চা বাগান দেখা যাচ্ছে। গ্রিন ফিল্ড নদীর পশ্চিম পাশে চা বাগানের পরিধি বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করছে।