ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতীয় রক্ষিবাহিনীর মতো র্যাব বিলুপ্তি এখন সময়ের দাবি। র্যাব কলঙ্কিত হওয়ার কারণে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণের আশঙ্কা রয়েছে। আর এসবের জন্য সরকার দায়ী।’
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গুম, খুন হওয়া স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে এ কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। প্রায় ২০ মিনিট খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখেন।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, ‘সরকার তরুণ প্রজন্মকে নির্মূলের প্রচেষ্টায় রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ গুম খুন অপহরণ হচ্ছে। খালে, বিলে, নদী-নালায় যেখানে সেখানে লাশ পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে পুড়িয়ে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোক জড়িত বলে তার স্বজনরা অভিযোগ করেছে।’
গুম, খুনের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কোথাও আজ নিরাপত্তা নেই। র্যাবের সদস্যরা উশৃঙ্খল ও বেপরোয়া হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কাজে র্যাবকে ব্যবহার করার ফলেই এই অবস্থা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে জঙ্গি এবং অপরাধ দমনে এই অ্যালিট ফোর্স গঠন করা হয়েছে। র্যাব এখন জনগণের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। তাই র্যাব বিলুপ্তির কথা বলেছি। র্যাব এখন বিপদজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
নাগরিকদের নিরাপত্তা ও প্রাণ রক্ষায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হবে। গুম, খুনের ঘটনা তদন্তের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিজ্ঞ আইনজীবী এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।’
লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, আজকের এই সভায় আমরা সকলেই বেদনাহত। আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণেরা খুন হচ্ছে, অপহরণ হচ্ছে, তাদেরকে বলপূর্বক নিখোঁজ করা হচ্ছে, নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ওপর উৎপীড়নের পাশাপাশি এখন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী এমনকি মানবাধিকার কর্মীরা পর্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়েছেন।’
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বেআইনি কার্যকলাপও যেন আর না ঘটে। বিচার-বহির্ভূত হত্যা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। সাদা পোশাকের কোনো বাহিনীর মাধ্যমে আর কোনো অভিযান চালানো যাবে না। অপহরণের মতো করে কিংবা রাতের অন্ধকারে কোনো গ্রেপ্তার করা আর চলবে না। কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে সাক্ষী রেখে, পুলিশ ও প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযোগ উল্লেখ করে তারপর গ্রেপ্তার করতে হবে। রিমান্ডের নামে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আটক অবস্থায় কোনো বন্দী নিহত বা আহত হলে তা বিচারের আওতায় আনতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, হেনস্তা, তাদের সদস্যদের হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার ও অপহরণের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।’
এছাড়া বেআইনিভাবে বন্ধ করে রাখা সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো অনতিবিলম্বে খুলে দেয়া, আটক সম্পাদক ও সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানান খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নিখোঁজসহ যত গুরুতর ও বেআইনি ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।