ঢাকা: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিহত নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানের মরদেহ ফিরিয়ে আনতে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের সঙ্কটকে দায়ী করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
লোক মারফত যোগাযোগের ফলে দু’দেশের ভুলবোঝাবুঝিতে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে বলে শুক্রবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে বাংলামেইলের সঙ্গে টেলিফোনে তিনি এ কথা বলেন।
বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘শুক্রবার সকালেই বিজিবির দুটি দল মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের জন্য পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা সে আবেদনে সাড়া না দিয়ে দুপুরের পর গুলি করতে শুরু করে। তবে গোলাগুলির ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।’
নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানের মরদেহ ফেরত আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা এবং নিহত মিজানের মরদেহ আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর কথা জানিয়েছে সরকারের উচ্চ মহল।’
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিজানের মরদেহ ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে বিজিবি। তবে এর আগেই মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে যেতে পারে বলে বাংলামেইলকে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক বিষয়ক সচিব মোস্তফা কামাল।
এর আগে আজ সন্ধ্যায় আবারো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের ২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকাস্থ মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে এসেছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বেলা সাড়ের ৩টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির পাইনছড়ি ৫২ নং সীমান্ত পিলার এলাকায় বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। নিখোঁজ বিজিবি কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের লাশ সনাক্ত করতে বিজিবি কর্মকর্তারা ৫২নং পিলার এলাকায় গেলে বিজিবি সদস্যদের ওপর গুলি চালায় মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা।
বিষয়টি বাংলামেইলকে নিশ্চিত করেছেন বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিকুর রহমান।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারের বিজিপি প্রথমে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরপর পাল্টা গুলি চালায় বিজিবি সদস্যারা।’
গত ২৮ মে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল টিমকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে বিজিপি। সেই সময় নিখোঁজ হন নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান। তাকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ মায়ো মিন্টথানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। সীমান্ত থেকে বিজিবির সদস্যকে আটক করায় কঠোর ভাষায় রাষ্ট্রদূতকে তিরস্কার করা হয়। একই সঙ্গে সীমান্তরক্ষীদের কাছে আটক বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমানকে অতি দ্রুত ছেড়ে দেয়ারও দাবি জানানো হয়েছিল।
এরপর শুক্রবার নিখোঁজ বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমানকে ফিরিয়ে দিতে বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক। এরপরই নাইক্ষ্যংছড়ির দোছাড়ি সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।