রোনালদো বনাম জার্মানি

0

image_96124_0ঢাকা: শিরোনাম দেখে বিস্ময়ে ভুরু কোচকাতে পারেন। একজন লড়বে ফুটবলের ‘পাওয়ার হাউস’ জার্মানির বিপক্ষে! আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ কী করে সম্ভব?

কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে পর্তুগিজ ভক্তদের মাঝে আকাশ ছোঁয়া আশা। সিআরসেভেনকে নিয়ে তারা আশার বসতি গড়ে বসে আছেন। রোনালদো যেন তাদের অনির্বচনীয় স্বাদ উপহার দেবে! কেউ কেউ তো রিয়াল মাদ্রিদ তারকার মাঝে দেখছেন দিয়েগো ম্যারাডোনার ছ্য়াও! এখানে ফুটবলের প্রবাদ পুরুষকে টেনে আনা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।

তবে আপনি যখন জানবেন এই পর্তুগাল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাধাই পেরোতে পারত না, যদি না রোনালদো অতিমানবীয় হয়ে উঠতেন। ইউরোপ অঞ্চল থেকে সরাসরি ব্রাজিল যাওয়ার টিকিট পায়নি পর্তুগাল। ‘এফ’ গ্রুপের দ্বিতীয় হওয়া দলটিকে তাই প্লে অফ ম্যাচে মুখোমুখি হতে হয় শক্ত প্রতিপক্ষ সুইডেনের। ঘরের মাঠে প্রথম লেগে রোনালদোরই একমাত্র গোলে হেরে বসে সুইডিশরা। ফিরতি লেগে বলতে গেলে সি আর সেভেন একাই শেষ করলেন জাতান ইব্রাহিমোভিচের সুইডেনকে। ফলে পর্তুগাল ৩-২ গোলে জিতে বিশ্বকাপের টিকিট পায়। উল্লেখ প্রয়োজন ওই দিনটি গোলই রোনালদোর পা থেকে এসেছিল।

তাহলে ‘ফুটবল ঈশ্বর’র সঙ্গে রোনালদোর মিল কোথায়? আছে। গড়পড়তা একটা দল নিয়ে ম্যারাডোনা একাই ‘৮৬’র বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিল আর্জেন্টাইনদের। আজ রাত ১০টায় সালভাদরে জার্মানির বিপক্ষে বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগে রোনালদোর অবস্থাও তাই। একেবারেই সাদামাটা একটা দল। যে দলের সবকিছুই আবর্তিত হয় একজনকে ঘিরে। রোনালদো আর পর্তুগাল  সমার্থক বললেও বোধহয় খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না। এখন দেখার অপেক্ষা সি আর সেভেন ম্যারাডোনা হয়ে উঠতে পারেন কি-না।

ব্রাজিল যদি বিশ্বকাপের চিরন্তন ফেভারিট হয়, তাহলে জার্মানি কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে না। এ পর্যন্ত ইউরোপের দলটি ১৭ বার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। আর ব্রাজিলের মতো সাত বার ফাইনাল খেলেছে জার্মানি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে তিনবার। রানার্সআপ হয়েছে পাঁচবার।  আর বিশ্বকাপ শুরুর ম্যাচে একবার ছাড়া তারা আর কখনোই হারের স্বাদ পায়নি। সেটিও ১৯৮২’র বিশ্বকাপে। আলজেরিয়ার বিপক্ষে ১-২ গোলে হেরে যায় জার্মানরা। ওই বিশ্বকাপেও তারা দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনাল খেলে।

ফুটবলে জার্মানরা কতোটা আধিপত্যবাদী তা ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকারের কথায় পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘ফুটবল হচ্ছে সেই খেলা, একটা বল দখলের জন্য ২২ জন্য ছোটাছুটি করে আর দিনশেষে জেতে জার্মানরা।’ সত্যি তো তাই। নিকট অতীতে বিশ্বকাপে চোখ রাখুন। সবচেয়ে ধারাবাহিক দলের নাম জার্মানি। ২০০২ বিশ্বকাপে ফাইনাল, ২০০৬ এবং ২০১০ দুটি বিশ্বকাপেরই সেমি ফাইনালে খেলেছে দলটি।

অবশ্য ফুটবলের এত এত সোনালী অতীত ভেবে কিন্তু মোটেও ফুলেফেঁপে উঠছেন না জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। বরং রোনালদোর পর্তুগালকে দারুণ সমীহ দেখিয়ে বলছেন, ‘পর্তুগাল বিপজ্জনক দল। পাল্টা আক্রমণে রোনালদো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। র্যাং কিংয়ে তারা ঠিক আমাদের পরেই, ৪ নম্বরে রয়েছে। তারা রোনালদো নির্ভর নয়। আক্ষরিক অর্থেই পর্তুগাল একটা বিপজ্জনক দল।’

যদিও বরাবরই জার্মানির বিপক্ষে পর্তুগালের ভাগ্য অতটা সুপ্রসন্ন ছিল না। ২০০৬ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে ১-৩, ২০০৮ এর ইউরোতে ২-৩ এবং ২০১২ ইউরোতে পর্তুগালকে হারতে হয়েছে ০-১ গোলে।  তবে রোনালদোকে নিয়ে দুশ্চিন্তার আরো কারণ আছে লোর। এই মৌসুমে রোনালদো যে একাই ৫০ গোল করেছেন।  ‘আমরা তার প্রচুর ভিডিও দেখেছি। তার দৌঁড়ানোর কৌশলটাও জানি। তাকে আটকাতে পুরো দলই সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’-বলেছেন লো।

অবশ্য যাকে নিয়ে জার্মান কোচের এত ছক সেই রোনালদোর কিন্তু প্রথম ম্যাচ খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বা পায়ের চোট ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারকে ভোগাচ্ছে। তারপরও হয়তো রোনালদো ছাড়া মাঠে নামার সাহস দেখাবে না পর্তুগাল! টুকটাক চোট সমস্যা আছে জার্মান শিবিরেও। চোটে পড়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে মার্কো রেউসের। হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে ছয় মাস মাঠের বাইরে ছিলেন সামি খেদিরাও। তাছাড়া জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লামের গোড়ালির সমস্যা আছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More