শিউরে উঠা নুর হোসেনের চাঞ্চল্যকর তথ্য!!!

0

7-marder-naranyanganjসাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন কলকাতায় পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জেরায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। একই সাথে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও দু’জন রাজনৈতিক নেতার সাথে গোপন বৈঠক হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন নূর হোসেন। অন্যদিকে নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের জবাবের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে গত ১৬ জুন সোমবার ভারতকে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এছাড়া নূর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যে ভবন থেকে, সেই একই ভবন থেকে ২০১২ সালে গ্রেফতার হয়েছিল বাংলাদেশের পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপার্টমেন্ট নামের ওই ভবনের পাঁচতলার যে ফ্ল্যাট থেকে দুই সহযোগীসহ নূর হোসেন গ্রেফতার হয়েছে, তার মালিককেও এখন খুঁজছে কলকাতা পুলিশ।  নূর হোসেনকে ভারতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ভাবছে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি। ৭ খুনের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি র‌্যাবের ৪ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বাইন (সুব্রত) দুই বছর আগে এই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেফতার হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে জাল মুদ্রার ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছিল। অবশ্য সুব্রত বাইন এর আগেও একবার নেপালে গ্রেফতার হয়েছিল, কিন্তু সেখান থেকে সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

কলকাতার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, কলকাতা পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই এসব বাংলাদেশি অপরাধীদের আটক না করে উল্টো জাল মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ব্যবহার করে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। জয়, পিচ্চি হান্নান, জাফর মানিকের মতো বাংলাদেশের বড় বড় সন্ত্রাসী ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপার্টমেন্টে যে বিভিন্ন সময় ছিল, সে ব্যাপারেও তথ্য থাকার কথা জানিয়েছেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কিন্তু আমরা যখনই এসব সন্ত্রাসীর অবস্থান সম্পর্কে কলকাতা পুলিশকে তথ্য দিয়েছি, তখনই তারা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অভিযান চালাতে গড়িমসি করেছে। এসব সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনেকের রাজনৈতিক যোগাযোগও ছিল বলে মনে করেন তিনি।

নূর হোসনকে ফিরিয়ে আনতে কতটা সময় লাগতে পারে? এ প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতের জবাবের অপেক্ষা করছি। ভারতের জবাবের পরই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নূর হোসেনের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত জানানোর পরই সরকার এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানাবে।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় এবং এর সঙ্গে র‌্যাবের কয়েকজন জড়িত থাকার কথাও মেনে নিয়েছে। সোমবার পশ্চিমবঙ্গের অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াডের (এটিএস) ধারাবাহিক জেরার মুখে স্বীকার করে নিয়েছে নূর হোসেন।

চার র‌্যাব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত টিম

৭ খুনের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি র‌্যাবের ৪ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউজে এ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেন র‌্যাব-১১-এর  সদস্য পংকজ, রনি, আসাদুজ্জামান ও সিরাজ। উল্লেখ্য, তদন্ত কমিটি গত ১৪ জুন নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১-এর সদর দফতর ও শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকাতে অবস্থিত স্পেশাল ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির ক্যাম্প অফিসের দু’টি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এসময় কমিটির লোকজন দু’টি ক্যাম্পের র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন ও ভেতরে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। এর আগে তদন্ত কমিটি নারায়ণগঞ্জের প্রত্যাহারকৃত ডিসি, এসপি, সাবেক ৩ ওসিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ছাড়াও নিহতের পরিবার ও সাক্ষী, সুশীল সমাজের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত কমিটির কাছে ৭ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিয়েছেন। খুনিরা অধরা ক্ষোভ প্রকাশ

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত র‌্যাবের চাকরিচ্যুত আরিফ হোসেন ও এম এম রানা, নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড মোর্তুজা জামান চার্চিল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পরেও বাকি খুনিরা অধরা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজন ও আইনজীবীরা। গত সোমবার  নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী মামলার বাদি সেলিম ইসলাম বিউটি এবং র‌্যাবের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার অভিযোগকারী শহীদুল ইসলাম।

সাক্ষাৎ শেষে শহীদুল ইসলাম জানান, র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত ২ কর্মকর্তা ও নূর হোসেনের বডিগার্ড চার্চিল স্বীকারোক্তি র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া র‌্যাবের অনেকের নাম বলেছেন। এছাড়া বলেছেন গডফাদারদের। অথচ তারা কেউই গ্রেফতার হয়নি। এ কারণে আমরা আশঙ্কা করছি স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দী ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে পরিবর্তন করে ফেলা হতে পারে। তবে এসপি সাহেব আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় এটি কখনো সম্ভব হবে না।
জানা গেছে, গত ৪ জুন নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত সেনাবাহিনীর অবসরে পাঠানো মেজর আরিফ হোসেন। আদালতে দেয়া লোমহর্ষক স্বীকারোক্তিতে ৭ জনকে অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যা ও লাশ ডোবানোর বিশদ বর্ণনা করেছেন আরিফ। এছাড়া ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নূর হোসেনসহ নির্দেশদাতা হিসেবে র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গডফাদারদের নাম বলেন তিনি। পরদিন ৫ জুন একই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত নৌবাহিনীর অবসরে পাঠানো লে. কমান্ডার এম এম রানা।

আরিফের মতো রানাও স্বীকারোক্তিতেও র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গডফাদারদের নাম এসেছে। তবে এখনো স্বীকারোক্তি দেননি ৬ষ্ঠ দফায় টানা ৩২ দিন রিমান্ডে থাকা র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক সেনাবাহিনীর অবসরে পাঠানো লে.কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। এদিকে গত ১৪ জুন একই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড গোলাম মোর্তুজা চার্চিল। স্বীকারোক্তিতে চার্চিল আদালতকে জানিয়েছেন, কাঁচপুরে বালুমহাল জনশূন্য করাসহ ৭ জনের লাশ ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে ওঠানো থেকে তিন নদীর মোহনাতে ফেলে দেওয়া পর্যন্ত র‌্যাবের সঙ্গেই ছিলেন চার্চিল। আর বার বার ওই সময়ে বেশ বিচলিত থাকা নূর হোসেন বার বার মোবাইলে চার্চিলের সঙ্গে কথা বলে সবশেষ আপডেট নিতে থাকেন।

উল্লেখ, গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্ব^র ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। অপহরণের পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার পর অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও তিন দিনের মাথায় শীতলক্ষ্যা নদীতে অপহৃতদের লাশ ভেসে ওঠার পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা র‌্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে নজরুলসহ সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১১-এর তখনকার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাকে অবসরে পাঠানো হয়। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা গ্রেফতার হন। তাদের মধ্যে আরিফ ও রানা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে সাত খুনের সাথে নিজেরা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More