আর্জেন্টিনা ভক্তদের লক্ষ-কোটি চোখ এখন ব্রাজিলের দিকে, যেখানে দীর্ঘ সময় পর বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দেশটির। কে কেমন খেলছেন, মেসি কী করলেন তা সবাই দেখছেন এবং জানছেন। দেশটির ফুটবল ঐতিহ্য নিয়ে এবার এখানে জেনে নিন আর্জেন্টিনা বিষয়ে ২০টি অজানা এবং চমকপ্রদ তথ্য।
১. দুই সপ্তাহে পাঁচ রাষ্ট্রপতি : ২০০১ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ১৩.২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ না পরিশোধ করতে পারায় ধ্বসে পড়ে অর্থনীতি। ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো ডি লা রুয়া পদত্যাগ করার পর নতুন প্রেসিডেন্টদের আনাগোনা চলতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে পাঁচজন প্রেসিডেন্টকে পায় দেশটি। শেষের জন ছিলেন এডুয়ার্দো যিনি প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্য দিয় ২০০২ এর জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসেন।
২. খোঁয়াড়ে আটক নাভাল ভেসেল : গত বছর ঘানার সমুদ্র বন্দরে আটকে রাখা হয় আর্জেন্টিনার নাভাল ভ্যাসেল লা ফ্রাগাটা লিবার্টেড। বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর ১.৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ না করায় কয়েক মাস আটকে থাকে জাহাজটি। হেজ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার পল সিঙ্গার পাওনাদারদের মধ্যে একজন। অবশেষে ওই ফাউন্ডেশনের অন্যান্য ম্যানেজাররা সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নেন। ঘানার আদালতে কয়েক বছর চলে মামলা।
৩. ফ্রাগাটার ক্রুদের মুক্তির ভিডিও : জাহাজটির সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছিল ক্রুদের। অবশেষে তাদের মুক্ত করে সেই ভিডিওচিত্র প্রকাশ করতে বাধ্য হয় আর্জেন্টিনা সরকার।
৪. বিমানকে নিরাপত্তা প্রদান : নাভাল ভেসেলের মতো দুঃখজনক ঘটনা যেনো না ঘটে সেজন্য ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেন বিমানের পেছনে।
৫. পুতুল ধ্বংস : বিশাল আকারের পুতুল ধ্বংস করা হয় এক নববর্ষে। প্রায়ই রাস্তা বন্ধ করে মানুষজন গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি করতেন এই শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
৬. বর্তমান প্রেসিডেন্টের শপিংয়ের নেশা ও প্লাস্টিক সার্জারি : ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনার দেখতে শুনতে তেমন সুন্দরী নন। তাই তাকে ভালো দেখাতে হবে। এ জন্য বিলাস পন্ন কিনতে বেজায় পটু তিনি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একবার সাক্ষাতের পর লোবোটিনের ২০ জোড়া জুতো আর লুইস ভোটন এবং হার্মেসের ব্যাগ কিনে দেশে ফিরলেন।
৭. মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ছড়াছড়ি : পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে আর্জেন্টিনায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বেশি। টেলিগ্রাফ জানায়, এদের সবাই কোনো না কোনো সময় ম্যারাডোনার চিকিৎসক ছিলেন।
৮. বিশ্বের সবচেয়ে চওড়া রাস্তা : আর্জেন্টিনার স্বাধীনতা দিবস ৯ জুলাই। ১৮৮৭ সালে এই রাস্তা তৈরির প্রস্তাব পাস হলেও কাজ শুরু হয় ১৯৩৭-এ। আশির দশকে এর কাজ শেষ হয়। দ্য নাইনথ অব জুলাই অ্যাভিনিউ রাস্তাটি ০.৬২ মাইল চওড়া যা বুয়েন্স আয়ারস শহরকে প্রায় দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছে।
৯. স্টেরয়েড হরমোন দেওয়া প্রাণী যখন পুতুল : বাদামী, কালো এবং সাদা রেশমি লোমে পূর্ণ ছোট একটি প্রাণী ফিরেট। একে সাধারণত খরগোশ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর্জেন্টিনায় স্টেরয়েড হরমোন দেওয়া জলজ্যান্ত ফিরেটকে রাস্তাঘাটে পুতুল হিসেবে বিক্রি করা হয়। প্রায় ১৫০ ডলারে বাচ্চাদের এই পুতুল কিনে দেন বাবা-মায়েরা।
১০. পেঙ্গুইনে মদ! : মাটি বা সিরামিক দিয়ে তৈরি হয় পেঙ্গুইন, অনেকটা জগ বা বোতল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। আর এসব বানানো হয় স্রেফ মদ খাওয়ার জন্য।
১১. গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন যখন বোতল : একটি প্লাস্টিকের বোতল বা গাড়ি ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত ব্লিচের বোতলটি কোনো গাড়ির ওপরে রেখে দেওয়ার একটি অর্থ- এই গাড়িটি বিক্রি হবে। মোবাইল নম্বর সেঁটে দিলে বোতল রাখা হয়েছে এমন গাড়ি দেখলেই ফোন দেবেন আগ্রহী ক্রেতা।
১২. ক্যাব ড্রাইভারের মুখের গতি : আর্জেন্টিনার ট্যাক্সি ক্যাবের ড্রাইভাররা আর কিছুতে খ্যাতি না কুড়োতে পারলেও একটি বিষয়ে তারা বিশ্বখ্যাত। তাদের গাড়ির চেয়ে মুখ বেশি গতিতে চলে। তাদের প্যাচালে অস্থির হয়ে যাবেন আপনি।
১৩. সুশ্রী আর্জেন্টাইনদের ট্যাক্স : সুদর্শন চেহারার জন্য বেশ অহংকার বোধ করেন আর্জেন্টাইনরা। তা ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারি ব্যাপক হারে চলে দেশটিতে। প্রেসিডেন্ট নেস্টর কির্চনার দেখতে মোটেও ভালো ছিলেন না। তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনার প্রয়াত স্বামী। ২০০৭ সালে গঞ্জালো ওটালোরা নামের একজন হারিজ হলেন প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস পিঙ্ক হাউজের সামনে। তার দাবি ছিলো, যারা দেখতে মোটেও ভালো নয় তাদের জন্য কর দিতে হবে সুদর্শনদের। কারণ সুন্দর মানুষরা সব জায়গায় সুবিধা পান। চেহারা ভালো না হওয়ার কারণে ওটালোরা প্রেসিডেন্টকে কমরেড বলে সম্বোধন করেন।
১৪. সরকারের তথ্যে অবিশ্বাস জনগণের, তবে বিপদ আনলেন অর্থনীতিবিদরা : আর্জেন্টিনায় অর্থনৈতিক মন্দার হার সহনশীল দেখালেন সরকার। জনগণও বিশ্বাস করছিলেন না। অবশেষে বিপদ ডেকে আনলেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বিভিন্ন গবেষণায় জানালেন, দেশটিতে এ মন্দা ২৫-৩০ শতাংশ। ফলে লাল কার্ড দেখালো আইএমএফ।
১৫. রাজনৈতিক দলগুলোর ব্র্যান্ড বিয়ার : ক্ষমতাসীন দল পেরোনিস্টের এর নেতা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জুয়ান পেরোনের স্ত্রী এভিটা পেরোন এই ঐতিহ্যের প্রচলন করেন। সাবেক এই ফার্স্ট লেডি দলের নিজস্ব ব্র্যান্ডের বিয়ারের প্রচলন করেন। পেরোন পেরোন বারে যখন ‘এভিটা’ বিয়ার পাওয়া যেতে শুরু করে তখন তা একটি সংস্কৃতি হিসেবে যত্নআত্তি পেতে থাকলো। বর্তমানে ‘মন্টোনেরো’ নামে আরো একটি পানীয় আনার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এটি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা এবং তার প্রয়াত স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বাজারে আনা হবে। অন্যদিকে, বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল রেডিক্যাল পার্টি তাদের নিজস্ব রিয়ার এনেছে।
১৬. ধরাছোঁয়ার বাইরে অ্যাপল : দেশটির সরকার অ্যাপলের আইফোনসহ সকল পণ্যকে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ, এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা আরো দৈন্যদশা দেখবে। তাই এখানে কদাচিৎ কারো হাতে অ্যাপলের পণ্য দেখা যায়। দুই একটি বিক্রি হলেও তার দাম আমেরিকার তিনগুন।
১৭. রোলিং স্টোন যেনো পুজোর দেবতা : রোলিং স্টোনের মিক জ্যাগারকে রীতিমতো পুজো করে আর্জেন্টিনার টিনএজাররা। তাদের এই পুজা-অর্চনা রোলিংগাস নামে পরিচিত। তা ছাড়া ইউএস এর ‘ডেড হেডস’ এর মতো ব্যান্ড দলগুলো যেনো দেবতা।
১৮. ডলারের জন্য দরখাস্ত : বিদেশ ভ্রমণের জন্য ডলার সংগ্রহ করতে চাইলে সরকারের কাছে আবেদনপত্র দিতে হয় জনগণকে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বাতিল হয়ে যায়।
১৯. ডলার রয়েছে ‘ব্লু মার্কেট-এ : সরকার না চাইলে কি হবে, মানুষ কি আর দেশের বাইরে যাবে না? তাই ডলারের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে কালোবাজারে যা ‘ব্লু মার্কেট’ নামে পরিচিত। পেসো দিয়ে যে কেউ সেখান থেকে ডলার পেতে পারেন।
২০. এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলেই ব্যাগ ভর্তি ডলার : যারা ব্লু মার্কেটে ডলার বিক্রি করেন বা অন্য কেউ ডলার সংগ্রহ করতে চাইলে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে কলোনিয়া ডি স্যাকরামেন্টো এলাকায় যেতে হবে। এটা উরুগুয়েতে পড়েছে। সেখানে গিয়ে অনেকেই ব্যাগ ভর্তি করে ডলার নিয়ে আসেন। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার