ভারতীয় পণ্যে নির্ভরশীলতা বাড়ছে

0
india_produck_61284ঢাকা: ভারতীয় পণ্যে বাংলাদেশের নির্ভরতা দিনদিন বাড়ছে। দেশটি থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য এলেও বিপরীতে রপ্তানি হচ্ছে অতি সামান্য। তাই ১৩ বছরে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের চেয়েও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে পণ্য রপ্তানি বাড়ানো বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবে এতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়েছে অশুল্ক বাধা। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তা দূর করা গেলে রপ্তানি বাড়বে। রপ্তানি বাড়লে বাণিজ্য ঘাটতিও পর্যায়ক্রমে কমে আসবে। বিকল্প হিসেবে প্রতিবেশী এ দেশটির বিনিয়োগকারীদের এদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ে সুসম্পর্ক দিনদিন বাড়লেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে না। ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর, এ ১৩ বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০০১-০২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ১০২ কোটি ইউএস ডলার বা ৭ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা (৭৮ টাকা ডলার ধরে)। ২০০২-০৩ অর্থবছরে ব্যয় ১৩৬ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। ২০০৩-০৪ অর্থবছরের ব্যয় ২০৯ কোটি ডলার। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ব্যয় ২০২ কোটি ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ব্যয় ১৮৬ কোটি ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ব্যয় ২২২ কোটি ডলার। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ব্যয় ৩৩৮ কোটি ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ২৮৪ কোটি ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যয় ৩২১ কোটি ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যয় ৪৫৭ কোটি ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ব্যয় ৪৭৩ কোটি ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৪৭৭ কোটি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৯৩ কোটি ডলার।
এ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মুনসুর যায়যায়দিনকে বলেন, ‘দেশে গার্মেন্ট পণ্য ছাড়া অন্য কোনো বড় পণ্য নেই যা ভারতে রপ্তানি করা যাচ্ছে। ছোট ছোট পণ্য দিয়ে সফলতা সম্ভব নয়। তাই ভারতকে এ দেশে ইন্ডাস্ট্রি করার সুযোগ দিতে হবে। দেশটির যেসব বিনিয়োগকারী এদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী তাদের সুযোগ দিতে হবে। এজন্য সরকার এবং বিজেএমইএকে উদার হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি কমানো আমাদের লক্ষ্য হলে হবে না। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে রপ্তানী বাড়ানো। এজন্য ভারতকে এদেশে পণ্য উৎপাদন করতে সুযোগ করে দিতে হবে। চীন, জাপানসহ বিভিন্ন উন্নত দেশগুলো এ সুবিধা দিয়ে থাকে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, বিগত ২০০১-০২ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে (১৩ বছর) ব্যবধানে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। ১৩ বছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৬১৮ কোটি ইউএস ডলার বা ২ লাখ ৮২ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এ ঘাটতির পরিমাণ কমাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রথম বছর অর্থাৎ ২০০১-০২ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৯৬ কোটি ইউএস ডলার বা ৭ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১২৭ কোটি ডলার, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ২০৩ কোটি ডলার, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১৮৮ কোটি ডলার, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১৬২ কোটি ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১৯৩ কোটি ডলার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৩০২ কোটি ডলার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২৫৬ কোটি ডলার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৯০ কোটি ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪০৫ কোটি ডলার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪২৪ কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪২১ কোটি ডলার এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৪৭ কোটি ইউএস ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সাধারণত ভারত ও চীন এ দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমারা যদি ওই দেশে কি কি পণ্য রপ্তানি করা যাবে তার সার্ভে করি এবং তাদের মার্কেট ধরতে পারি তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।’ তিনি বলেন, পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক বাধা কমলেও অশুল্ক বাধা রয়ে গেছে। অশুল্ক বাধা দূর করা গেলে রপ্তানি বাড়বে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ইপিবির হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০১-০২ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ কোটি ইউএস ডলার, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৮ কোটি ডলার, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ১০ কোটি ইউএস ডলার, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১৪ কোটি ইউএস ডলার, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ২৪ কোটি ইউএস ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২৯ কোটি ইউএস ডলার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৩৫ কোটি ডলার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২৭ কোটি ইউএস ডলার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩০ কোটি ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫১ কোটি ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫৬ কোটি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ইউএস ডলার রপ্তানি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমদানি ও রপ্তানি সমান থাকার কথা। বেড়ে যাওয়া দেশের জন্য ক্ষতির বিষয় নয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে আমদানি ব্যয় বাড়েনি। দেশের মেশিনারিজের প্রয়োজন তাই ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানি করেছেন। জার্মান, জাপান, চীন দেশগুলোর তুলনায় ভারতে মেশিনারিজের দাম কম। ফলে খরচ বাঁচাতে আমদানিকারকরা ভারত থেকে আমদানি করেছে।
বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি ও পোশাক শিল্প রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার জন্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই একটি দেশের জন্য ভালো বিষয় হতে পারে না। রপ্তানি বাড়াতে পারলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাবে। এজন্য সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উদ্যোগ নিতে হবে।
সালাম মুর্শেদী বলেন, ভারত একটি বড় মার্কেট। এখানে আমাদের রপ্তানি করার বড় সুযোগ আছে। এজন্য সরকারকে আলোচনা করতে হবে। দেশের পণ্যের জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটতে (বিএসটিআই) যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে। বিএসটিআইতে সেবার মান আরো বাড়াতে হবে। যেন বর্ডারে রপ্তানি চালান পরীক্ষা করে আমাদের পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারে। যায়যায়দিন
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More