ঢাকা: কাঠঠোকরা সারাদিন কাঠ ঠুঁকরে ছিদ্র করে ফেলে কিন্তু মাথাব্যথা বা মস্তিষ্কের ক্ষতি হয় না কেন? ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছিলেন মনস্তত্ত্ববিদ ফিলিপ মে। ১৯৭৬ সালের এক দিন লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সহকর্মীদের এমন প্রশ্ন করেছিলেন মে। সিজোফ্রেনিয়া বিশেষজ্ঞ হয়ে এমন একটি মৌলিক প্রশ্ন তিনি করে বসেছিলেন যা পরে অনেক বিজ্ঞানীকেই ভাবিয়েছে।
শুধু প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত হননি- নিজেই গবেষণায় নেমে পড়েন মে। তিনি জানতে চান, ঘণ্টায় ১৬ মাইল বেগে কাঠঠোঁকরা কাঠ কুঁদে বেড়াচ্ছে এবং এটা পাখিটি প্রতিনিয়তই করছে তারপরও তার মাথায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না- এর রহস্য কী?
এক প্রাণিবিজ্ঞানী বন্ধুর কাছ থেকে দুটি কাঠঠোকরা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন মে। পাখি দু’টির মাথার হাড় নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। এতে দেখতে পান, কাঠঠোকরার করোটির সামনের অংশে স্পঞ্জের মতো একটি হাড় রয়েছে যা আঘাত শোষক (shock absorbe) হিসেবে কাজ করে। হাইয়িড (hyoid) নামে আরেকটি হাড় আছে যা তার জিহ্বাকে সাপোর্ট দেয় এবং মাথার চারদিকে নিরাপত্তা বেল্ট হিসেবে কাজ করে।
তিনি আরো আবিষ্কার করেন যে, কাঠঠোকরার মস্তিষ্কটি (মগজ) মাথার খুলির মধ্যে খুব শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে। এছাড়া মানুষের মস্তিষ্কের মতোই এক ধরনের তরল একে ঘিরে রাখে।
তবে এই গঠনটি শুধু কাঠঠোঁকরার নাকি অন্য পাখি প্রজাতির মধ্যেও আছে সে ব্যাপারে তখন পরিষ্কার ধারণা ছিল না।
২০১১ সালে একদল চীনা গবেষকরা আবিষ্কার করেন, কাঠঠোকরার করোটির হাড় তুলনামূলক শক্ত, অনেক বেশি আঁটসাট, সুবিন্যস্ত এবং ঠোঁট অনেক স্থিতিস্থাপক।
মে আরেকটি অনুমান করেছিলেন যে, কাঠঠোকরা সব সময় উলম্বভাবে কাঠে আঘাত করে ফলে মস্তিষ্কে আঘাত এড়াতে পারে, যেমনটি মানুষের ক্ষেত্রে হয়। তবে দেখা গেছে, কাঠঠোকরা বিভিন্ন কোণে কাঠে আঘাত করে।
তবে মাথার হাড়ের গঠন ও মস্তিষ্কের চারপাশে তরল থাকার কারণে কাঠঠোকরার মস্তিষ্ক সুরক্ষিত থাকে বলে মনে করা হলেও এসব পাখির মস্তিষ্ক একশ ভাগ সুরক্ষিত এটা বলা যায় না।
এ বিষয়ে মের দ্বিতীয় গবেষণাপত্র প্রকাশের কিছু পরে এক স্নায়ুবিদ Archives of Neurology তে লেখা এক চিঠিতে জানান, তার বাড়ির জানালার গ্লাসে অসাবধানতাবশত ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পায় একটি কাঠঠোকরা। ঘণ্টাকয়েক পর পাখিটি মারা যায়।