ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৃহৎ দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এনপিপি থেকে বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বে গঠিত এ জোটে থাকছে ১৩ বা ১১টি দল। সম্ভাব্য নাম ডেমোক্র্যাটিক
ন্যাশনালিস্ট অ্যাল্যায়েন্স (ডিএনএ) অথবা ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনালিস্ট ফোরাম (ডিএনএফ)। আগামীকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ জোটের ঘোষণা দেয়া হবে। এ তথ্য বাংলামেইলকে নিশ্চিত করেছেন শেখ শওকত হোসেন নিলু নিজেই।
জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে নানা সময়ে বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে এ নতুন জোট গঠন করা হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের ছোট দলগুলো থেকে বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃত হওয়া নেতারা ওই জোটে যোগ দেবেন। জোটের বাইরের কিছু দলও এতে যোগ দেবেন। জোটের গঠনতন্ত্রসহ সব কিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নিলু জানান, ইতিমধ্যে জোটে যোগ দিতে ইচ্ছুক দলগুলো নেতাদের ৫-৬টি বৈঠকও সম্পন্ন হয়েছে। গঠণতন্ত্র অনুযায়ী জোটের দলগুলোর মধ্যে একজনকে আহ্বায়ক করা হবে। আর অন্যান্য দলের নেতারা হবেন যুগ্ম আহ্বায়ক। ৬ মাস পর বৈঠক করে জোটের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
এছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই জোট গঠন করবেন তারা। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আলাদাভাবে অংশ নেবেন। পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ ৮/৯টি দাবিতে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামেও থাকবে এই জোট।
সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন চলাকালীন জোট বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মহাসচিব আতিকুল ইসলামকে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কার করেন দলের চেয়ারম্যান এএইচএম কামরুজ্জামান খান। একই কারণে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল মালেককে বহিষ্কার করেন দলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। এছাড়া ন্যাপ থেকে পদত্যাগ করেন আনোয়ার হোসেন।
এই তিনজনসহ আরও কিছু দলছুট নেতাদের নিয়ে নতুন জোট গঠন করা হচ্ছে।
জোট গঠন সম্পর্কে এনপিপি থেকে বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু বাংলামেইলকে বলেন, ‘দুই পুকুরের পানিই পচে গেছে। দেশের মানুষ আর ওই দুই জোটকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই দুই জোট থেকে মেধাবী নেতৃত্ব বেরিয়ে আসছে না ।’
তিনি বলেন, ‘নতুন একটি জোট গঠনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এতে ইসলামিক ধারার দলও যোগ দেবে।’
নিলু আরও বলেন, ‘নতুন জোটের নেতাদের আমি বলেছি, দুইবার পরাজিত হতে হবে। কারণ প্রথমে এই জোট নিয়ে সবাই হাসাহাসি করতে পারে। তবে হয়তো একদিন এই জোট ক্ষমতায় আসবে।’
এনপিপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া আমাকে বহিষ্কার করতে পারেন না। তিনি অন্যায়ভাবে আমাকে বহিষ্কার করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর ইফতার মাহফিলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
আগামীতে জোট গঠন করার পর যদি এ ধরনের অনুষ্ঠানে বড় দুই জোটের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাহলেও যাবো।’
নতুন জোট আগামী নির্বাচনে ২০ দল না ১৪ দলের পাশে থাকবে- এ ব্যাপারে নিলু বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যেই জোট গঠন করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
নিলুর নতুন জোট গঠন সম্পর্কে এনপিপির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কিংবা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে তৃতীয় কোনো জোটকে এদেশের মানুষ মেনে নেবে
না। কারণ তারা সব সময় মীর জাফর কিংবা দালাল হিসেবে মানুষের কাছে আখ্যায়িত হবে।’
নিলু বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতির সাথে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাক্ষাৎ না করা ভুল ছিল। এতে করে কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। নির্দলীয় সরকারের রূপরেখায় ১০ জন উপদেষ্টার নাম দেয়া, যাদের মধ্যে সাত জনই মৃত। নির্বাচনে
না যাওয়া। এসব নিয়ে মন্তব্য করায় জোট নেতারা ক্ষুব্ধ হন। এসব বক্তব্য দেয়ার পরই জোট নেতাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। তারা মনে করতে শুরু করে আমি প্রতিবাদী হয়ে উঠেছি, যা তাদের পছন্দ হয়নি। তার ফলশ্রুতিতে আমাকে বহিষ্কার করা হয়। যা তারা করতে পারেন না।’
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য হোটেল লবিতে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করা কতোটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই গণভবনে রাজনীতিবিদদের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দেন এনপিপির তৎকালীন চেয়ারম্যান শওকত হোসেন নিলু। পরে ১৮ জুলাই দলীয় ফোরামে সভাপতির কাছে এর ব্যাখ্যা চান এনপিপির
তৎকালীন মহাসচিব ফরিদুজ্জামানসহ দলের সিনিয়র নেতারা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহাসচিবকে বহিষ্কার করেন নিলু।
এরপর ২০ জুলাই দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ করায় শওকত হোসেন নিলুকে বহিষ্কার করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ফরহাদকে নিযুক্ত করা হয়। এরপর গত ১১ আগস্ট ২০ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে এনপিপি থেকে নিলুকে বহিষ্কার করে জোট।