ঢাকা: তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে ৩-০ তে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়ম রক্ষার শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে স্বাগতিকরা হারায় ৯১ রানে। ফলে হারের চক্রে থেকে গেল টাইগাররা।
স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৩৮/৭ (৫০ ওভার)
বাংলাদেশ: ২৪৭/৮ (৫০ ওভার)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী ৯১ রানে
সে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভো আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক প্রমান করেন ২৫৮ রানের বিশাল জুটি গড়া ব্রাভো এবং রামদিন। দুজনের দুটি শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৩৩৮ রান করে স্বাগতিকরা। জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে ৩৩৯ রান।
ক্যারিবীয়দের হয়ে ব্যাটিংয়ে ওপেনিং করতে এসেছিলেন ক্রিস গেইল ও লিন্ডল সিমন্স। বাংলাদেশের বোলিং সূচনা করেন সোহাগ গাজী। শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ক্যারিবীয়রা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে সিমন্সকে মাহামুদ্দুল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দি করে সাজঘরে ফেরত পাঠান মাশরাফি। পরের ওভারে আল আমিন ফেরত পাঠান ক্রিস গেইলকে। উইকেটের পিছনে মুশফিকের হাতে ধরা দেওয়ার আগে গেইল করেন মাত্র ৬ রান।
শুরুর বিপর্যয় কাটাতে ব্যাটিং ক্রিজে এসেছিলেন ড্যারেন ব্রাভো এবং ১১২ ম্যাচ খেলা প্রথম ম্যাচের জয়ের নায়ক দিনেশ রামদিন। এ দুজনে জুটি গড়ে করেছেন ২৫৮ রান।
এ ম্যাচ দিয়ে ৭৬ ম্যাচ খেলা ড্যারেন ব্রাভো দুই হাজারি রানের ক্লাবে ঢুকেছেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ব্রাভো ১২৭ বলে করেন ১২৪ রান। সাতটি চার হাঁকালেও বাংলাদেশের বোলারদের লজ্জা দিয়ে আটটি বিশাল ছক্কা হাঁকান ব্রাভো।
এর আগে রামদিন নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন মাত্র ৯০ বলে। এটি গত চার ম্যাচে তার দ্বিতীয় শতক। শতক হাঁকানোর পরে মাশরাফির এক ওভারে তার তোলা রানের গ্রাফটি ছিল এমন, ০,০,৪,৬,৬,৬। টাইগার বোলারদের নিয়ে ছেলে-খেলা করে তিনি করেন ১৬৯ রান। আল আমিনের বলে নাসিরের হাতে ধরা পড়ার আগে ১২১ বলের সাহায্যে সাজানো ইনিংসে তিনি ৮ টি চারের পাশাপাশি মেরেছেন ১১ টি বিশাল ছ্ক্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে যৌথভাবে তৃতীয় হয়ে বসেছেন ব্রায়ান লারার পাশে।
এছাড়া দশ রান করে বিদায় নেন কিরন পোলার্ড। স্যামিও করেন দশ রান। ৫০ ওভার শেষে সাত উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা করে ৩৩৮ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন আল আমিন হোসেন।
পাওয়ার প্লে’র দশ ওভারে স্বাগতিকরা করে দুই উইকেটে ৩০ রান। তবে, পাওয়ার প্লে’র শেষ বলে ব্রাভোকে স্ট্যাম্পিং করার সহজ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মুশফিক। ২০ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮৮ রান। ২০তম ওভারে মাশরাফির করা বলে গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে রামদিনের তোলা একটি বল লুফে নিতে পারেন নি আব্দুর রাজ্জাক। তাদের দলীয় শতক আসে ২১.২ ওভারে। ৩০ ওভার শেষে এ রান দাঁড়ায় ১৬০। আর ৪০ ওভারে তারা তুলে ফেলে ২৪৫ রান।
গ্রানাডায় পরপর দুই ম্যাচে বাজে হারের সাথে বাংলাদেশ সিরিজ খুঁইয়ে ছিল আগেই। সিরিজের শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামে তারা। নিয়ম রক্ষার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল। নির্ধারিত ৫০ ওভারে আট উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রান তোলে লাল-সবুজরা।
৩৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিং ক্রিজে এসেছিলেন তামিম ইকবাল এবং প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আনামুল হক বিজয়। ইনিংসের প্রথম ওভারে জেসন হোল্ডারের বলে ড্যারেন স্যামির কাছে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বিজয়।
তামিমের সঙ্গে এরপর জুটি বাঁধতে এসেছিলেন ইমরুল কায়েস। আবারো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে রামপলের বলে কেমার রোচের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে বিদায় নেন ইমরুল। পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশ দুই উইকেট হারিয়ে ৪১ রান তোলে। ২০ ওভার শেষে টাইগাররা দুই উইকেট হারিয়ে ৯১ রান করেছিল।
ওপেনার তামিম ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সাময়িক বিপর্যয় সামাল দিয়ে ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছিলেন। দুজন মিলে করেছিলেন ৯৯ রানের জুটি। তামিম তার ক্যারিয়ারের ২৬তম অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন। ৬২ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৫৫ রান করে সুনিল নারাইনের ঘুর্ণিতে সরাসরি বোল্ড হন ১৮ ম্যাচ পর অর্ধশতক পাওয়া তামিম।
মুমিনুল হক ভাল কিছুর আভাস দেওয়ার আগেই মাত্র ৫ রান করে ব্রাভোর বলে স্যামির হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ৩০ ওভার শেষে লাল-সবুজদের সংগ্রহ চার উইকেটে ১২৮ রান। ৩৫ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৫৪ রান। জিততে হলে ৯০ বলে আরো ১৮৬ রান করতে হতো বাংলাদেশকে। হাতে ছিল ৬ টি উইকেট।
ওপেনার তামিম ইকবালের পর টাইগার দলপতি মুশফিকুর রহিমও অর্ধশতক করেছেন। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৬তম অর্ধশতক। রামপলের বলে স্যামির তালুবন্দি হওয়ার আগে মুশফিক ১১৩ বলে ৮টি চারের সাহায্যে করেন ৭২ রান। মুশফিকের বিদায়ে নাসিরকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩৮ বলে এক ছয় আর দুই চারে তিনি ২৭ রান করে রোচের বলে উইকেটের পিছনে রামদিনের গ্লাভসবন্দি হন।
শেষদিকে, নাসির হোসেন এবং সোহাগ গাজীর ৩৭ রানের জুটি দলের রান বাড়াতে কিছুটা ভূমিকা রাখে। নাসির করেন ২৬ রান আর গাজীর ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। মাশরাফি করেন ১৫ রান। ক্যারিবীয়ানদের হয়ে চারটি উইকেট নেন রামপাল।