সন্দেহভাজন একটি ওয়বেসাইট থেকে পাঠানো ইমেইলের সূত্র ধরে হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম বের হয়ে এসেছে। হ্যাকারদের পরিচয় নির্দিষ্ট করা না গেলেও বোঝা গেছে তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যবস্তুগুলো।
পাঁচটি দেশের ওপর চীনা গুপ্তচরবৃত্তির চাঞ্চল্যকর এ তথ্য এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন এডওয়ার্ড স্নোডেনের কল্যাণে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির কথা আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
অবশ্য সাইবার তদন্তকারী সংস্থা ফায়ারআই চীনের বিশেষ কোনো গুপ্তচর দলের প্রতি ইঙ্গিত করেনি। জানা গেছে, যে কম্পিউটারগুলো আক্রান্ত হয়েছে সে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যক্রমের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
ফায়ারআইয়ের মুখপাত্র নার্ট ভিলেনেয়াভ বলেছেন, ‘সাধারণত বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে থাকে, কিন্তু এ আক্রমণগুলো তা থেকে ভিন্নতর। এর লক্ষ্য মূলত কূটনীতিসংশ্লিষ্ট ওয়েব সার্ভারগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।’
গত বছর ভিলেনেয়াভ এবং জাপানের সাইবার নিরাপত্তারক্ষাকারী সংস্থা ট্রেন্ড মাইক্রোর একজন গবেষক, জাপান, ভারত এমনকি তিব্বতের নানা সংস্থার ওপর চীনের সাইবার আক্রমণ চিহ্নিত করতে সমর্থ হন। সেসময় একজন হ্যাকারের ব্যক্তিগত পরিচয় বেরিয়ে আসে। আলোচিত সে হ্যাকার সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, চীনের প্রথম সারির ইন্টারনেট কোম্পানি টেনসেন্টের কর্মী।
ভিলেনেয়াভ জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক আক্রমণগুলো খুবই বাছাইকৃত এবং সংবেদনশীল বিষয়গুলোর ওপর হয়েছে। মালওয়্যার প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে। সে সময়ে ২০টি দেশের অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট একটি সম্মেলনে যোগ দিতে প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। তখন তারাই ছিলেন হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তু।
হ্যাকাররা তাদের একটি ইমেইল পাঠিয়েছিল, যেখানে একটি ওয়েবলিংক দেয়া ছিল। আর বলা হচ্ছিল, লিংকটিতে ক্লিক করলে দেখা যাবে কার্লা ব্রুনি সারকোজির গোপন নগ্ন ছবি। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজির আলোচিত এ স্ত্রী-র গোপন ছবি দেখতে গিয়ে অজান্তে আক্রমণের শিকার হয়েছেন সংশ্লিষ্টেরা।
ফায়ারআই এর গবেষকদল ২৩টি কমান্ডিং কোড নিষ্ক্রিয় করতে সমর্থ হয়েছিলেন, যেগুলোর সাহায্যে হ্যাকাররা টানা ১ সপ্তাহ কম্পিউটারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। তখনই তারা আবিষ্কার করেছিলেন, ২১টি সার্ভারের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলতে সমর্থ হয়েছিলেন হ্যাকাররা, যাদের মাঝে ৫টি ছিল উল্লিখিত দেশগুলোর পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়েল সার্ভার।
ভিলেনেয়াভ জানিয়েছেন, হ্যাকাররা চাইনিজ, এ ব্যাপারে সন্দেহ না থাকলেও, এর বেশি কিছু আমরা এখনো জানতে পারিনি।
এ ব্যাপারে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে। গত সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক মুখপাত্র জানান, চীন এ ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত তো নয়ই, বরং এ ধারার আক্রমণের তারাও শিকার।
এদিকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে চীনা সাইবার আক্রমণের শিকার হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র বিভাগ সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের সাবেক অফিসার জেমস এ লুইস, যিনি একই সাথে ওয়াশিংটনস্থ স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পরিচালক, এক বিশেষ বিবৃতিতে বলেন, ‘ইতোপূর্বে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং প্রত্যেকবার চীনের নাম উঠে এসেছে।’
চেক প্রজাতন্ত্রের মুখপাত্র ডেভিড ফোরাস মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দিতে রাজি রা হলেও জানিয়ে রেখেছেন, তার দেশ সাইবার আক্রমণ ঠেকাতে সম্ভাব্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। অপরদিকে লাতভিয়া, পর্তুগাল, হাঙ্গেরী এবং বুলগেরিয়ার মুখপাত্ররা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্যই করতে রাজি হননি।
এ গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিরোধ সম্পর্কে জেমস এ লুইস হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের অন্তর্জালিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ হ্যাকারদের জন্যে খুবই সহজ ব্যাপার। ইন্টেলিজেন্স কখনোই এদের পুরোপুরি ঠেকাতে পারবে না।