হামাস নেতা প্রকাশ করলেন যুদ্ধবিরতি দেরির কারণ

0
হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুসা আবু মারজুক
হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুসা আবু মারজুক

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে কী কারণে দেরি হয়েছিল তার প্রকৃত ঘটনা ফাঁস করেছেন হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুসা আবু মারজুক। তিনি জানিয়েছেন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস যেসব শর্ত দিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল, চুক্তি হলে হামাসের সিনিয়র নেতাদের টার্গেট করে ইসরাইল কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারবে না এবং হামাস নেতারা গাজা উপত্যকায় মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারবেন। এছাড়া, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর গুপ্তহত্যা পরিচালনা করা যাবে না। কিন্তু ইসরাইল কোনোমতেই এসব শর্ত মানতে রাজি হচ্ছিল না। এ কারণেই বার বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি পিছিয়ে গেছে। তবে, শেষ পর্যন্ত গত মঙ্গলবার এ শর্ত মেনেই ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হয়। মুসা আবু মারজুকের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট মনিটর এ খবর প্রকাশ করেছে।
আরো যা আছে চুক্তিতে : মুসা আবু মারজুক জানান, চুক্তি অনুযায়ী গাজা উপত্যকার ওপর থেকে ইসরাইলি অবরোধ সম্পূর্ণভাবে উঠে যাবে। অর্থ লেনদেনের ওপর ইসরাইল, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমস্ত বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
আবু মারজুক জানান, ২০১২ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির ওপর ভিত্তি করে মূলত এ চুক্তি হয়েছে তবে এবার ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে ক্রসিং পয়েন্টগুলো খুলে দিতেই হবে যাতে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহয়কতা ও ত্রাণ সহায়তাসহ নির্মাণসামগ্রী সহজেই পৌঁছাতে পারে।
চুক্তির শর্ত : আবু মারজুকের ভাষ্যমতে নিচের শর্তগুলোর ভিত্তিতে হামাস-ইসরাইল চুক্তি হয়েছে।
ক্রসিং পয়েন্ট : গাজার পাঁচটি ক্রসিং পয়েন্টের মধ্যে বর্তমানে মাত্র দুটি ক্রসিং পয়েন্ট কাজ করছে। এ চুক্তি অনুসারে বাকি তিনটি ক্রসিং পয়েন্টও খুলে যাবে।
রাফাহ ক্রসিং : রাফাহ ক্রসিং সম্পর্কে আবু মারজুক জানান, এ বিষয়ে ফিলিস্তিন ও মিসরের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে এবং সেই বৈঠকে ঠিক করা হবে রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট সম্পূর্ণভাবে খুলে দেয়ার বিষয়টি। তবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিলিস্তিনের সঙ্গে মিসরের এ বৈঠক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
মাছ ধরা ও বাফার জোন : সমুদ্রে মাছ ধরার এলাকাকে আপাতত ছয় নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাড়ানো হবে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে ১২ নটিক্যাল মাইলে নেয়া হবে। তবে তা হতে হবে চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই। আর বাফার জোন সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে।
অর্থ লেনদেন ও কর্মীদের বেতন : গাজা উপত্যকায় অর্থ লেনদেনের ওপর ইসরাইল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠে গেছে এবং গাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন দেয়ার দায়িত্ব এখন ফিলিস্তিনের জাতীয় ঐক্য সরকারের ওপর।
গাজার পুনর্গঠন : মুসা আবু মারজুক জানান, গাজার পুনঃনির্মাণের বিষয়ে আগামী মাসে মিসরে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গাজা পুনঃনির্মাণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার জন্য সব পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানোর পর সম্মেলেনের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হবে। ফিলিস্তিনের ঐক্য সরকার গাজার পুনঃনির্মাণ কাজ পরিচালনা করবে।

বন্দি বিনিময় এবং বন্দর : ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলের হয়ে ইসরাইলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নেয়া মুসা আবু মারজুক জানান, এ চুক্তির পক্ষে একমাত্র গ্যারান্টার হচ্ছে মিশর। আর বন্দি বিনিময়, বিমান ও সমুদ্রবন্দরের মতো ইস্যুগুলোর মীমাংসার জন্য এক মাসের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। সূত্র: রেডিও তেহরান

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More