ঢাকা: পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে শনিবার রাতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া কমপক্ষে দুই শতাধিক আহত হয়েছে। রোববার সকালেও দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে বলে খবর দিয়েছে ডন পত্রিকা।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে, দুই সপ্তাহ ধরে বিরোধী নেতা ইমরান খান ও ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরীর নেতৃত্বে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে। মূলত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পদত্যাগের দাবীতেই কর্মসূচী পালন করছিল তারা।
শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর ইসলামাবাদের বাসভবন ঘেরাও এর জন্য প্রায় ২৫ হাজার বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে চল্লিশোর্ধ একজন নিহত হয়েছে বলে ডন পত্রিকা জানিয়েছে। দু পক্ষের সংঘর্ষের সময় ওই ব্যক্তি রেড জোন এলাকায় পানি ভর্তি গর্তে পরে গিয়ে মারা যান। গত দু সপ্তাহের বিক্ষোভে এটিই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।
স্থানীয় হাসপাতালের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের ‘দা ন্যাশন’ পত্রিকা জানিয়েছে, শনিবার রাতের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৪০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশুও রয়েছে। আহতদের ইসলামাবাদের দুটি প্রধান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে ২০ জন পুলিশও রয়েছে।
এদিকে ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরী অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর অমানুষিকভাবে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন,‘গত ১৭ দিনের আন্দোলনে কোন সংঘাত হয়নি। আমাদের কর্মীরা নিরস্ত্র অবস্থায় আন্দোলন করছে।কিন্তু এখন সরকার আমাদের ওপর অকল্পনীয়ভাবে হামলা চালিয়েছে।’
তিনি হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন । তবে তার এ অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে শুক্রবার অচলাবস্থা নিরসনে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ মধ্যস্থতার জন্য বিক্ষোভরত দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে, কার্যত সে আলোচনা ব্যর্থ হয়।
শুক্রবারের আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর শনিবার রাত নয়টার দিকে ইমরান খান এবং তাহিরুল কাদরির নেতৃত্বে হাজার হাজর বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে রওয়ানা হয়। পুলিশ প্রথমে বাধা না দিলেও একপর্যায়ে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ভিতর দিয়েই এগোতে থাকে পিটিআই ও পিএটির কর্মী-সমর্থকেরা। রাত দুইটার দিকে তারা পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে পৌঁছে যায়। তখন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। শনিবার সারারাত এবং রোববার সকালেও দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন,‘কাউকে রেড জোনের স্পর্শকাতর ভবনগুলোতে ঢুকতে দেয়া হবে না। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পদত্যাগের সম্ভবনাও নাকচ করে দেন।
এদিকে শনিবারের ওই সংঘাতের পর রোববার দেশজুড়ে হরতালের ডাক দিয়েছেন ইমরান খান।