ঢাকা: জনগণের কাছে দলের রাজনীতি স্পষ্ট করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।
সোমবার সন্ধ্যায় দলের ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে হবে। অনেকের ধারণা বিএনপি ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করবে। তাই তাদের আচরণ এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতি স্পষ্ট করতে হবে।’
একক দলের আন্দোলনের ফল সময় সাপেক্ষ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন বিভেদের সময় নয়। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই এই দানবীয় ও স্বৈরাচারী সরকারকে অতি দ্রুত নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘মামলার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মামলায় পিছু হটানো যাবে না। যদি তা মনে করে থাকেন, তবে আহম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। এ দেশের মানুষ কখনো ফ্যাসিস্ট সরকারকে মেনে নেয়নি, নেবেও না।’
কিছু ভুল ভ্রান্তি থাকলেও বিএনপিকে দেশের মানুষ অন্তরে ধারণ করে বলে দাবি করেন মির্জা আলমগীর।
আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে সব কাজ করে অভিযোগ করে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘তারা কখনো বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি। এখন ক্ষমতায় থাকার জন্য আইন, সংবিধান সব পরিবর্তন করেছে। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেশকে অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার জনগণের সব আশা-আকাঙ্খা ধুলিসাৎ করে দিয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতি আর লুটপাট করছে না।’
সাম্প্রতি সম্প্রচার নীতিমালার বিরুদ্ধে সম্পাদকদের বক্তব্য দেয়ার জন্য নিজে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বলে জানান মির্জা আলমগীর। এ সময় বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার (অভিশংসন আইন) সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের বিচার চাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘তিনি একটি দেশের সর্বোচ্চ পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কীভাবে দেন? এসব বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিলে আবার গায়ে জ্বালা ধরে, গালিগালাজ করেন। তখন মামলা দেয়া হয়। আমার নামেও একটি মানহানির মামলা দেয়া হয়েছে। এখন আবার তদন্তও হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, ‘শতভাগ পাসের মাধ্যমে জাতিকে মেধাহীন করা হচ্ছে। আর যারা এগুলো করছে তাদের সন্তানরা বিদেশে লেখাপড়া করছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ মহাসংকটে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপিকে দায়িত্ব নিতে হবে। নেতাকর্মীদের শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জিবীত হতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হাত দিয়েছি। অনেক ভাইদের ভেতরে এখনও দেখেছি ১/১১ ভূত এখনো নামে নাই। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এলাকার ভেতর যারা ১৮ বছর ধরে প্রভুত্ব বিস্তার করে রাখছে। এ প্রভুত্ব রাখা যাবে না। আপনার এলাকার নোতকর্মী যদি চায় ভোটের মাধ্যমে আপনি থাকবেন। জোর করে, ষড়যন্ত্র করে কেউ থাকার চেষ্টা করবেন না। আমাদের লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। বিজয় আসবেই।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি। অন্যদের মধ্যে দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট ড. পিয়াস করিম প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।