সালমান শাহ ঢাকাই চলচ্চিত্রে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়কের নাম। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে তাঁর অভিষেক। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি উপহার দিয়েছেন ২৭টি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। সালমানের অধিকাংশ ছবিরই নায়িকা ছিলেন শাবনূর। বর্তমানে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন তিনি। সালমান শাহকে নিয়ে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটায় শাবনূর কথা বলেন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরেছেন মনজুর কাদের।
সালমানের চোখে আমি…
সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথাই বলেছেন। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, এসবের কোনোটিই সত্য নয়। সালমানের কোনো বোন ছিল না। তাই সে আমাকে তাঁর ছোট বোন হিসেবেই দেখত। আমাকে সে পিচ্চি বলে ডাকত। সালমানের মা-বাবাও আমাকে খুবই আদর করতেন। সালমানের কারণে তাঁরা আমাকে তাঁদের মেয়ে হিসেবেই দেখতেন।
আমার চোখে সালমান…
সালমান যেহেতু আমাকে ছোট বোনের মতো দেখত, আমিও তাঁকে সেভাবেই সম্মান করতাম। তবে আমাদের মধ্যে কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্কও ছিল। সালমানের বউ সামিরাও কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সালমান নাচ একটু কম পারত। সে তুলনায় আমি নাচে বেশি পারদর্শী ছিলাম। সালমান আমাকে প্রায়ই বলত, ‘আমাকে একটু নাচ দেখিয়ে দে তো।’ আমিও আগ্রহ নিয়ে কাজটা করতাম।
প্রথম দেখা…
সালমানকে প্রথম দেখি এফডিসিতে। মৌসুমী আপুর সঙ্গে শুটিং করছিল। আসা-যাওয়ার মধ্যেও দেখা হতো। তবে খুব একটা কথা হতো না। তখন শুনেছি, ফিল্মে সালমান শাহ নামে নতুন একজন হিরো এসেছে। আনুষ্ঠানিক পরিচয় তুমি আমার ছবিতে অভিনয় করার সময়। তখন কাজের কারণে বন্ধুত্ব হয়। আমাদের প্রথম ছবি তুমি আমার মুক্তি পাওয়ার পর সুপারহিট হয়।
স্মৃতিতে সালমান …
সালমানের কথা অনেক মনে হয়। সালমান যদি বেঁচে থাকত তাহলে সে কি হতো, তা শুধু সে নিজেই জানে। আমি মনে করি, কলকাতার উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটিটা যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, আমাদের দুজনকেও সবাই সেভাবেই গ্রহণ করত। বাংলা চলচ্চিত্রের অবস্থাও এখনকার মতো হতো না।
সালমান-শাবনূর প্রেমের গুঞ্জন…
এটা একেবারে সত্যি কথা, সালমানকে আমি ভাই ছাড়া আর অন্য কোনো চোখে দেখতাম না। সালমানের মৃত্যুর পর কিছু লোকজন আমাকে জড়িয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছে। কিছু সাংবাদিকও আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের মুখরোচক গল্প ছেপেছেন। এটা করে কী লাভ হয়েছে, আমি জানি না। আমি আমার ক্যারিয়ারটা অনেক কষ্ট করে তৈরি করেছি। তিল তিল করে গড়ে তুলেছি। কিছু সংখ্যক লোক গুজব ছড়িয়ে আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করেছে।
যেমন দেখেছি সালমানকে…
সালমান অনেক বড় মনের মানুষ। বয়সে বড় সবাইকে সে যথেষ্ট সম্মান করত। কোনো অহংকার তার মধ্যে ছিল না। অনেক বেশি ভালো ছিল। সহশিল্পীদের সবার প্রতি খুব আন্তরিক আর কাজপাগল একটা ছেলে ছিল। আমাদের দুজনের বোঝাপড়াটা ছিল চমত্কার। বলতে পারেন, একে অন্যের চোখের ইশারা বুঝতে পারতাম।
সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে স্মৃতি…
শুটিংয়ে সব সময় সালমানের বউ সামিরা সঙ্গে থাকত। সামিরা, আমি ও সালমান খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। অনেকে অনেক কথা বলছে, কিন্তু সামিরা সত্যিকার অর্থেই আমার ভালো বন্ধু ছিল। আমরা একসঙ্গে কত অসাধারণ সময় কাটিয়েছি, তার কোনো হিসেব নাই। এমনও সময় গেছে, শুটিংয়ের সময় সামিরা আমাকে চুড়ি পরিয়ে দিয়েছে। কোন পোশাকে আমাকে মানাবে, সেটাও প্রায় সে বলে দিত। কানের দুলগুলো ম্যাচিং করে পরিয়ে দিত। আমাদের মধ্যে কোনোদিন কোনো ধরনের মনোমালিন্য হয়নি।
সালমানের মৃত্যুসংবাদ জানার পর…
সালমানের মৃত্যুসংবাদটা যখন পাই, তখন আমি বাসায় ছিলাম। হঠাত্ করে কে যেন ফোন করে জানায়, সালমান শাহ মারা গেছে। আমি উল্টো ধমক দিয়ে বলি, কি বলে এসব! আমার ছোট বোন বাইরে গিয়ে সালমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়ে আসে। আমি তখন পুরোপুরি হতবাক হয়ে যাই। এরপর এফডিসিতে সালমানকে দেখতে যাই।
সালমানকে আবার ফিরে পেলে যা জানতে চাইতাম…
আমার সঙ্গে যদি কোনো দিন দেখা হয় তখন সালমানকে জিজ্ঞেস করব, সালমান তুমি কেন মরে গেলে? তোমার কী কষ্ট ছিল? তুমি কিসের দুঃখে মরে গেলে? তোমার এত কিছু থাকা সত্ত্বেও কেন তুমি মরে গেলে। তোমার তো কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। এসব আমার খুব জানার ইচ্ছা। যদি কখনো সালমানের দেখা পাই, তাহলে আমি তাঁকে এই কথাগুলো জিজ্ঞেস করব।