বাংলাদেশের ক্রিকেটে টেস্ট ফরমেটে তিন হাজার রানের একমাত্র মালিক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর প্রায় ১৪টি বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ খেলেছে ৮৫টি টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু তার সেই রেকর্ড এখনও ছুঁতে পারেনি তার সমসাময়িক ও নতুন প্রজন্মের কোন ব্যাটসম্যান। এই সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে তার আক্ষেপ, এই রেকর্ডটি এর আগে ভাঙতে পারেনি কোন ব্যাটসম্যান। সদ্য জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দলের ম্যানেজার হিসেবেও ছিলেন তিনি। দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন। সম্প্রতি দলের জাতীয় সমস্যা ও উত্তরণের পথ নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক মানবজমিনে’র স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দলের দুর্বলতা
যদি দলের পরিশ্রমের কথা বলেন, বলবো তাতে কোন ঘাটতি ছিল না। সবাই চেষ্টা করেছেন। আমরা অনুশীলন ম্যাচে খুব ভাল করেছিলাম। কিন্তু মূল খেলায় মাঠে যে পারফরমেন্স দরকার ছিল সেটি করা সম্ভব হয়নি। আমরা মাঠে ব্যর্থ হয়েছি। আসলে যে দিকটায় এখন আমাদের মূল দুর্বলতা তাহলো একটি উইকেট পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অল্প রানে অনেক উইকেট পড়ে যাওয়া। এটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আমাদের বেশ ভুগিয়েছে। শেষ টেস্টে আমরা চা বিরতি পর্যন্ত বেশ ভাল করছিলাম। এরপর একটি উইকেট পড়ে গেল আর আমরা সেখান থেকে বের হতে পারলাম না। আবার যদি জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে ম্যাচ দেখেন সেখানেও একই ঘটনা। আমি বলবো এটি এখন আমাদের বড় সমস্যা। এই একটি সমস্যা যদি দূর করতে পারি তাহলে আমরা ভাল করতে পরব।
ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে মুক্তির পথ
আমাদের ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু এই ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে আমাদের বের হতে হবে। এ জন্য অবশ্যই কোচরা কাজ করছেন। এটি কোচদেরই দায়িত্ব। তবে আমি সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে সমাধানের পথ দিতে পারি। তাহলো ক্রিকেটারদের মানসিক শক্তি বাড়াতে হবে। কারণ এ সমস্যাটা মানসিক কারণেই হচ্ছে। আমরা সহজেই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেট
আমরা দেশে যে উইকেটে খেলি তা যে বাইরে গিয়ে পাব এটা আশা করাই ভুল। আর সেরকম উইকেট দেশে বানানো যাবে তাও না। কারণ, আমাদের আবহাওয়া ও মাটি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের মতো না। কিন্তু আমরা এখন কিছু বাউন্সি উইকেট তৈরি করতে পারি। বাউন্সি বলতে উইকেটে কিছু ঘাস থাকবে। যাতে পেসাররা কিছুটা সুবিধা পায়। অনেক দিন ধরেই এমন উইকেট বানানোর কথা ছিল কিন্তু এর জন্য বাধা ছিল অপর্যাপ্ত মাঠ। এখন আমাদের মাঠ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। এই মাঠ গুলোতে বেশ কিছু উইকেট এখন বানানো সম্ভব যেখানে ঘাস থাকবে।
ক্লাব ক্রিকেটে লম্বা ওভারের ম্যাচ
আমি মনে করি না যে ক্লাব ক্রিকেটে লম্বা ওভারের ম্যাচের প্রয়োজন আছে। কারণ, আমরা ওয়ানডেতে বেশ ভাল। আমি বিশ্বাস করি, এখনও ওয়ানডেতে যে কোন দলকে হারাতে পারি। এই ৫০ ওভারের উন্নতির জন্য ক্লাবগুলো অন্যতম ভূমিকা রেখেছে। ক্রিকেটাররা যদি আন্তর্জাতিক লেভেলে খেলতে চায় তাহলে তাদের জন্য অন্যতম হলো প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা। তার জন্য বাইরে থেকে কেউ কিছু করতে পারবে না। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে লম্বা সময় খেলে নিজের সামর্থ্যটা দেখানো যায়। আর সেই মানসিক শক্তিটা যদি ক্রিকেটাররা অর্জন করতে না পারে তাহলে কার কি করার আছে। মাঠে দায়িত্ব নিয়ে খেলাতো ক্রিকেটারেরই দায়িত্ব।
আপনার রেকর্ড প্রসঙ্গে
বাংলাদেশের হয়ে আমি যে রান (৩ হাজার) করেছি তা যে খুব বেশি তা নয়। তবে আমি যে কঠিন সময়ে করেছি সেটি আলাদা বিষয়। আমি বলবো আমার রেকর্ডটা এত দিনে কোন ব্যাটসম্যানের ভেঙে ফেলা উচিত ছিল। এটি আমার জন্য দুঃখের হতো না, আনন্দেরই হতো। তামিম, সাকিব, মুশফিক তাদের সুযোগ আছে আমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। আর এখন মুমিনুলতো বেশ ধারাবাহিক খেলছে।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ
যখন জিম্বাবুয়ের মতো দেশের সঙ্গে খেলবেন তখন প্রত্যাশা থাকবে জয়ের। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলতে নেমে হারলেও কিছু করার নেই। তাই এই সিরিজটি সব দিক থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপ ২০১৫ খুব বেশি দিন বাকি নেই। শুধু তাই নয়, আমাদের র্যাঙ্কিংয়েও উন্নতি করার এটি বড় সুযোগ। তার জন্য আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে যেমন আমরা বাইরে থেকে সাপোর্ট দিব তেমনি ক্রিকেটারদেরও মাঠের পারফরম্যান্সটা ঠিক রাখতে হবে।
পেস বোলারদের সম্ভাবনা
এটি সত্য যে পেস বোলিংয়ে এখনও আমাদের বেশ ঘাটতি আছে। আমরা মাশরাফি আর তাসকিনদের মতো আরও অনেক বোলার পেতাম যদি আরও আগে থেকে পেস বোলারদের নিয়ে কাজ করতে পারতাম। কিন্তু এখন আমি মনে করি হিথ স্ট্রিকের মতো ভাল পেস বোলিং কোচ আছে দলে। সেটার সুফল আমরা পাব। তবে তার জন্য আমাদেরতো একটু আপেক্ষা করতেই হবে। ছয় মাস থেকে এক বছরতো লাগবেই।
Prev Post
Next Post