ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত অনেকদিন ধরেই এদেশের রাজনীতিতে মিত্র শক্তি। আর এই মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযমের মৃত্যুতে অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করলো বিএনপি। অথচ সমমনা ও জোটভুক্ত দলগুলোর কোনো নেতার মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন কিংবা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। অনেক সময় দলটির কোনো নেতা মৃত ব্যক্তির বাসায় গিয়েও পরিবারকে সমবেদনা জানান। তবে গোলাম আযমের মৃত্যুর একদিন পার হয়ে গেলেও কোনো প্রতিক্রিয়াই জানায়নি দলটি।
যদিও জামায়াতের আলোচিত সাবেক এ আমিরের মৃত্যুতে বিএনপির নীরব ভূমিকার অনেকটাই ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটা তো সবাই জানে তিনি (গোলাম আযম) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত। সম্ভবত এই কারণেই বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।’
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলামেইলকে বলেছেন, ‘যদিও গোলাম আযমের অনেক বিষয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভূমিকা ছিল। আমি সেটাকে অস্বীকার করতে পারি না। তহলে তো ইতিহাসকেই অস্বীকার করা হবে। এ বিষয়ে দলের অবস্থান জানি না, তবে গোলাম আযমের মৃত্যুতে আমি তার পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং ভাষাসৈনিক হিসেবে গোলাম আযমের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে।’
শুক্রবার বিকেলে গুলশানে দলের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে গোলাম আযমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামের উদ্যোগে শুক্রবার বাদ জুমা মহানগরীর হেতেম খাঁ গোরস্থান চত্বরে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
এসময় তিনি বলেন, ‘গোলাম আযম দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি কোনোদিন কোনো শক্তির কাছে মাথানত করেননি।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর বিএনপির কয়েকজন নেতা বাংলামেইলকে জানান, গোলাম আযমের মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কোনো শোক প্রকাশ করেননি। অথচ রাজশাহীতে জামায়াতের সঙ্গে মিলে মিশে গায়েবানা জানাজায় অংশ নিলেন বুলবুল। তিনি শুধু অংশই নেননি। তাকে নিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোলাম আযমের মৃত্যু হয়। তবে এর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।