ছোট বেলা থেকেই ডানপিঠে ছিলেন মোস্তফা কামাল। সপ্ন ছিল সৈনিক হবেন, কিন্তু এতে বাঁধসাধেন বাবা। একরোখা আর ডানপিঠে সভাবের মোস্তফা কামাল বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগদেন সেনাবাহিনীতে। প্রথমেই তার পোস্টিং হয় কুমিল্লা সেনাবাহিনীতে। ৭১’র মার্চের মাঝামাঝি ৪র্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাম্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। ১৯৯৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখানে জন্ম গ্রহন করেন মোস্তফা কামাল। আজ জাতীর এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের জন্মদিন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পর মেজর শাফায়াত জামিল তার গুটিকয়েক বাঙালী সেনা সদস্য নিয়ে পাক অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল খিজির হায়াত খান ও পাকিস্থা সেনাদের নিরস্ত্র করে বন্দী করেন। আর এই মিশনে অংশগ্রহন করেন সিপাহী মোস্তফা কামাল। একে একে শুরু হয় প্রতিরোধ। সিপাহী মোস্তফার সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতা দেখে মেজর শাফায়াত জামিল তাকে যুদ্ধকালীন সময়ে ল্যান্সনায়েকের দায়িত্ব প্রদান করেন। এতে মোস্তফা কামাল ১০ জন সৈন্যের সেকশন কমান্ডার হন। ১৬ই এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে চিহ্নিত করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তরদিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৭ই এপ্রিল পাকবাহিনী দরুইন এলাকায় পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, এরকম অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপদতা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। সবাই পিছু হটলেও আসেনি মোস্তফা কামাল এল এম জি দিয়ে গুলি চালিয়ে পাকবাহিনীতে তটস্থ করে রাখেন। আর এরই মাঝে বাকী মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে স্থান ত্যাগ করেন। পাকবাহিনী এলাকা ছেড়ে চলে গেলে মোস্তফা কামালকে খুঁজে না পেয়ে পুণরায় দরুইন আসেন মেজর শাফায়াত জামিল ততক্ষনে এলাকাবাসী ট্রেঞ্চের কাছে একজনকে পড়ে থাকতে দেখেন গায়ে গুলি ও বেয়নেটের দাগ মাটিতে পড়ে আছেন মোস্তফা কামাল। তার আতœত্যাগের কারনে বেঁচে গেলেন বাকী মুক্তিযোদ্ধারা। এলাকাবাসী সেখানেই তাকে সমাহিত করলেন। তার এই মহান ত্যাগ ও বীরত্বের জন্য পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠের মর্যাদা। আর ভোলা বাসী পেয়েছেন তাদের বীর ও গর্বের প্রতীক ৭জন বীর শ্রেষ্ঠের একজন মোস্তফা কামাল।
বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই বেঁচে আছেন মা মালেকা বেগম বয়স ৮০ ছুঁই ছুই। বয়সের ভারে নুঁইয়ে পড়া বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের মা বেঁচে আছেন খোকা ফিরে আসবে এই ভরসায়। শরীরে নানা রোগ বাসা বেধেছে। চোখে আগের মত স্পষ্ট দেখতে পাননা মালেকা বেগম। এর পরেও খোকা ফিওে আসবে তাই পথ চেয়ে তাকিয়ে থাকা। ১৬ই ডিসেম্বর এলেই দেশের আপামর জনতা ঘটা করে পালন করে বিজয় দিবস সরকারের পক্ষ থেকেও শহীদদের পরিবারের খোঁজ খবর নেয়া হয়। ডিসেম্বর শেষ হলে তাদের ভূলে যায় সবাই। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, হিপাহী হিসেবে চাকুরী করায় পেনশনের ১৪০০টাকা পন পরিবার। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্ট হতে মাসে ৪৫০০ টাকা প্রদান করা হয়। মা মালেকা বেগম ছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠের স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের পরিবারে সদস্যরা রয়েছেন। প্রাপ্য টাকা সবার মাঝে ভাগ করে দেয়ার ফলে সামান্যই অংকে পরিনত হয়। যা দিয়ে এ সময়ে সংসার চালানো সম্ভব হয়না। পরিবারের দাবী মোস্তফা কামাল জীবন দিয়েছেন দেশের জন্য, তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত সংসারের হাল তিনিই ধরতেন। তাই করুনা নয় বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের স্থায়ী দায়িত্ব ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন সরকার এই আশা মোস্তফা কামালের পরিবার ও ভোলা বাসীর।