কুড়িগ্রাম: বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫। চাঞ্চল্যকর ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর পূর্ণ হলো।
২০১১ সালের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক পিলারের ৩নং সাব পিলারের পাশে ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা।
দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের আশ্বাসে আশা-নিরাশার দোলায় দিন কাটছে ফেলানীর পরিবারের। নানা অজুহাতে একাধিকবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশ হলেও হাল ছাড়েনি ফেলানীর পরিবার।
মৃত্যুর ৪ বছর হতে চললেও কাঁটাতারের বেড়ায় বিএসএফ’র গুলিতে নিহত মেয়ের শোক আজও ভুলতে পারেনি মা জাহানারা বেগম ও বাবা নূর ইসলাম।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর পূর্তির প্রাক্কালে মা জাহানারা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ফেলানী হত্যা মামলায় ভারতীয় বিএসএফ’র বিশেষ আদালত দফায় দফায় বিচার বন্ধ করে আমাদের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কাঁটাতারের বেড়ায় অমানবিকভাবে ফেলানীকে গুলি করে হত্যার বিচার ভারত সরকার না করলেও আল্লাহর আদালতে একদিন এই বিচার হবেই।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক পিলারের ৩নং সাব পিলারের পাশে বাবা নুর ইসলামের সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে আসার সময় বিএসএফ নির্মমভাবে গুলিতে করে হত্যা করে ফেলানীকে।
এরপর লাশ ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে বিএসএফ ৮ জানুয়ারি লাশ হস্তান্তর করে বিজিবির কাছে। ৯ জানুয়ারি দ্বিতীয়দফা ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানার কলোনীটারী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ২ বছর ৮ মাস ২৬ দিন পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহার জেলার বিএসএফ’র ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত আদালতে বিচার কাজ শুরু হয়। ১৯ আগস্ট ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, মামা আ. হানিফ সাক্ষ্য দেন।
ভারতীয় বিএসএফ’র আসাম ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (কমিউনিকেশনস) সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারক বেঞ্চ কঠোর গোপনীয়তায় বিচার পরিচালনা শেষে ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।
রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে ভারত সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে আদালত মুলতবি করায় ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা জর্জ কোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহম লিংকন ও ৪৫ বিজিবি’র তৎকালীন কমান্ডার লে. কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ কুচবিহারের উদ্দেশে রওনা হয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন।
১৭ নভেম্বর পুনঃবিচারের কার্যক্রম শুরু হয়। আদালত চলাকালীন বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ ২২ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিচার কাজ ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।