লন্ডন: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুম এবং অত্যাচার-নিপীড়নের অভিযোগে ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালতে (ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস) একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এ মামলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক, র্যা বের ডিজি বেনজীর আহমেদ এবং সীমান্ত বাহিনী বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যস্থ শহীদ জিয়া স্মৃতিকেন্দ্রের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মামলার কথা জানানো হয়।
মামলা করার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের প্রতি সম্প্রতি পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবি প্রধানের প্রকাশ্য হুমকি, প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমনের হুমকির বিচারের দাবিতে একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় নিজে বাদী হয়ে এই মামলা করেছি।
গত ৩০ জানুয়ারি এ মামলা করা হয়েছে বলে জানান শরিফুরজ্জামান তপন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্টের আহবায়ক এমএ মালেক, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিক, বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, সৈয়দ জাবেদ ইকবাল, এমাদুর রহমান এমাদ, খসরুজ্জামান খসরু, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিন, আলিমুল হক লিটন, হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, শহীদ মুসা, মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির রাসেল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করে ক্ষমতা দখল করে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ক্ষমতার দখলদারিত্ব বজায় রাখতে তারা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তারা মানুষের ভোটের অধিকার শুধু কেড়ে নেয়নি; সভা-সমাবেশের অধিকারও হরণ করেছে।
প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড চালানোর ঘোষণা দিয়ে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় নামার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ওইদিন তারা প্রকাশ্যে রাজপথে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ খুন করে উল্লাস করেছিল। ওই আন্দোলনের ফসল মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের হাত ধরে ক্ষমতাসীন হন শেখ হাসিনা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণমাধ্যম বন্ধ করে এবং সভা-সমাবেশ বন্ধ করে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৩০ হাজার প্রতিবাদী মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিরেন তিনি। শেখ হাসিনাও আজ একই পথ বেঁচে নিয়েছেন। বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। রাজপথে প্রতিবাদী মানুষের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে। আজো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। বাকশাল আজ নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ৩ জানুয়ারি সরকার বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে। তার ছোট ছেলের মৃত্যুর শোকে যখন তিনি কাতর, তখনো জড়ানো হচ্ছে একের পর এক মিথ্যা মামলায়। চলমান আন্দোলন শুরু হওয়ার পর র্যা বের ডিজি বেনজীর আহমেদ, পুলিশের আইজি শহীদুল হক, বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ রাজনৈতিক ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে গুলির হুকুম দিচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রধানদের প্রকাশ্যে হুঙ্কারের পর ২০-দলীয় জোটের প্রায় ২৭ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের আদালতে আজ ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগ নেই। বিচার ও আদালত চলে সরকারের ইচ্ছায়। কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তিনটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বাংলাদেশে মানবাধিকার বিরোধী কার্যক্রমগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই এই মামলার মূল লক্ষ্য বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।