ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে দেশ যখন একটি রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে ঠিক তখনই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভারত সফরে গেলেন। তার এই সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন চলছে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে যোগ দিতে ব্যক্তিগত সফরে এরশাদ ভারতের রাজস্থান গেছেন। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও দেশটির পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বরখাস্ত হওয়ার পর এরশাদের এই সফরকে সাধারণ মানুষ ‘একান্তই ব্যক্তিগত সফর’ বলে মানতে নারাজ। দেশের এ কঠিন মুহূর্তে হঠাৎ করেই তার এ সফর নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত সফরের অন্তরালে এরশাদ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি নরেন্দ্র মোদি সরকারের মনোভাব জানার চেষ্টা করবেন। ভারত সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে দ্যূতিয়ালী করতেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, এরশাদ সেখানে তিনদিন অবস্থা করবেন এবং বিজেপির বিভিন্ন নেতা ও নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করবেন।
এদিকে গত ২৮ জানুয়ারি হঠাৎ করেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে বরখাস্ত করা হয়। তার এই বরখাস্তে সরকার বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে বলে দাবি ওই জাপা নেতার।
গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে তৎকালীন ভারত সরকারের সুদৃঢ় সমর্থন ছিল। নির্বাচনের আগে ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসেছিলেন সুজাতা সিং। আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের যখন তোড়জোর চলছিল ওই সময় ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর অন্যরকম গুরুত্ব বহন করেছিল।
সেসময় সুজাতা সিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। এসব বৈঠকে গণতন্ত্র, নির্বাচন, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। মনে করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের সময় ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস নেত্বত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কোনো বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি।
বৈঠকের পর এরশাদ বলেছিলেন, ‘সুজাতা সিং তাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ করেছেন এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না গেলে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটবে। তারা ক্ষমতায় আসবে।’
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ভারত নতুন সরকারকে স্বাগত জানায়। মনমোহনের পর নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসে নতুন দিল্লিতে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই ধারণা করেছিলেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট রাজনৈতিকভাবে চাঙ্গা হতে পারে। কিন্তু সার্ক সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভারত সফরের পর সে ধারণা অনেকটা উবে যায়।
তবে ঢাকায় আওয়ামী লীগ সরকারের অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায় গত ২৬ জানুয়ারির পর থেকে। এদিন বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত সফরে আসেন। তিনি আসার পরই নরেন্দ্র মোদি বরখাস্ত করেন সুজাতা সিংকে।
সফরকালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ফিল র্যাইনার। ওবামার সঙ্গে ওই আলোচনায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি দিল্লির আগের মনোভাবে কোনো নড়চড় হয়েছে কি না তা নিয়ে নীতি নির্ধারকরা চিন্তিত।
এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, বাংলদেশের ব্যাপারে মোদি সরকারের আগে যে মনোভাব ছিল তাতে পরিবর্তন এলে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা বেশ দূরহ হবে। সেই আশঙ্কা থেকেই ভারতে পাঠানো হয়েছে এরশাদকে।
দেশের এমন পরিস্থিতিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হঠাৎ করে ভারত গেলেন কেন সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর কাছে। তবে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে এরশাদের আলোচনার কথা তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।
বাংলামেইলকে তিনি বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) তার বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে যোগ দিতে ব্যক্তিগত সফরে ভারত গেছেন।’
বিয়েতে যোগদানের পাশাপাশি এরশাদ দিল্লিতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনি বিয়ের দাওয়াতে গেছেন তাই তার দিল্লি যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাকে ভারতে দ্যূতিয়ালী করতে পাঠানো হয়েছে এরশাদকে- এমন প্রশ্নের জবাবে জাপার মুখপাত্র বলেন, ‘না, না, তাকে প্রধানমন্ত্রী পাঠাবেন কেন। তিনি ব্যক্তিগত কাজেই গেছেন।’
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন এরশাদ। আজ শুক্রবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার।