কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী একেবারেই সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না। যারা তার সমালোচনা করছেন তারাই দল থেকে ছিটকে পড়ছেন। পদ-পদবি ছেঁটে দেয়া হচ্ছে।
মমতার সর্বশেষ শিকার হতে যাচ্ছেন সাংসদ কুনাল ঘোষ। এর আগে শতাব্দী রায় প্রসেনজিত থেকে শুরু করে অনেকেই মমতার রোষাণলে পড়ে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন।
সর্বশেষ শুক্রবার কুনাল ঘোষ সংবাদ সম্মেলন করে তার উপর মমতার ক্ষোভের কারণগুলো বলার চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরোক্ষভাবে।
তিনি বলেছেন, গ্রেপ্তারের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সব জানিয়ে যাবো। কুনাল ঘোষের এ বিস্ফোরক মন্তব্যের পর তৃণমুল ছেড়ে কংগ্রেসে আসা সোমেন মিত্র এ অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখার জন্য সিবিআইকে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে কুনাল ঘোষ বলেছেন, দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিষিয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে তিনটি কারণ রয়েছে।
এক, রায়গঞ্জে অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনার পরে সাংবাদিক হিসেবে তিনি সরকারি অবস্থানের সমালোচনা করেছিলেন।
দুই, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয়ার সময়ে টাউন হলে তিনি সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন।
তিন, জানুয়ারি মাসের একটি ঘটনা, যা তিনি পরিষ্কার করে বলতে চাননি। এরই পরিণাম হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ কুণালের।
তাঁর আশঙ্কা আজই সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার করা হতে পারে তাঁকে। রাজ্য ও জাতীয় মিডিয়াকে ডেকে এ কথা জানিয়ে শুক্রবার নিজের বাড়িতে ক্যামেরার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ।
গ্রেফতার হওয়ার আগে শনিবারই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সারদা-কাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়ার আর্জি জানাতে চান তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ।
সারদা-কাণ্ডে যে সব বড় বড় মাথা জড়িত বলে এত দিন তিনি অভিযোগ করে এসেছেন, গ্রেফতারের পরে তাঁদের সকলের নাম লিখিত ভাবে পুলিশকে জানাবেন। আর সেই সব নাম পৌঁছে দেবেন সংবাদমাধ্যমের কাছেও।
আর যদি গ্রেফতার না হন? তা হলেও সেই সব নাম শনিবার তিনি প্রকাশ করে দেবেন বলে এ দিন জানিয়েছেন।
তাঁর অভিযোগ, সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে যাঁরা দিনের পর দিন সুবিধা ভোগ করেছেন, তাঁরা আজ ‘বাংলার ঘরে ঘরে ভগবান জ্ঞানে পূজিত!’
তবে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে চাননি কুণাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে বলেছেন, ‘আমি তাঁকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাই। আমাকে তো পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। মমতাদি, আপনি ভাল থাকবেন!’
তবে পাশাপাশি তিনি এটাও দাবি করেছেন যে, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ছিলেন তৃণমূল নেত্রীরও ঘনিষ্ঠ। কুণালের বয়ান অনুযায়ী, ‘সারদার লক্ষ্য ছিল, যাতে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠে আসেন মমতা। সুদীপ্ত বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম, দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন, সে ভাবেই আমি চ্যানেল সাজাচ্ছি।’