ঢাকা: বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল একটি বিষণ্ন মাস। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিরোধী দল অবরোধ নামে সিরিজ বিক্ষোভের ডাক দেয়। এরফলে ৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এবং বিক্ষিপ্ত সহিংসতা নিত্তনৈমিত্তিক কাজে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ধবংস হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট অগ্নিবোমায় দগ্ধ লোকে ভরে গেছে।
এই খারাপ সংবাদের মধ্যে ছোট একটি আশা জাগানিয়া সংবাদ এসেছে-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সংখ্যালঘু প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে।
বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ (সাধারণত) স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঘটে থাকে। একজন অবসরে যাওয়ার পর সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।
এর আগেও একবার সংখ্যালঘু বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার বিচারপতিদের অবসরের বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য এ পদে আর নিয়োগ পাননি।
সংখ্যালঘুকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈচিত্র্যের প্রতি অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ।
শপথ নেয়ার পর ১৮ জানুয়ারি বিচারপতি সিনহা বিচার বিভাগকে আধুনিকীকরণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি ঔপনিবেশিক আমলের আইনের সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে ন্যায়বিচার শুধু সেকেলে আইনের কারণেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, কাজের পাহাড় জমেছে এখানে। সুপ্রিম কোর্টে ৩ লাখ আর নিম্ম আদালতে ২৪ লাখ মামলা জমে আছে।
বিচারপতি সিনহা বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফেরানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে এতে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ পাল্টে গেছে- এমনটাও মনে করার কারণ নেই। বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাস পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ব্যাপক সামরিককৃত এলাকা। সেখানে নিয়মিত সহিংসতার সূত্রপাত হয়।
এখানে আইনী ব্যবস্থার মধ্যেই নিপীড়নের সংস্কৃতি রয়েছে, যেটা বিপজ্জনক। আমাদের বিচার বিভাগে সততা শক্তিশালীকরণ ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার কাজটি বিচার বিভাগের প্রধানের জন্য সহজ নয়।
বিচারপতি সিনহার নিয়োগ কোনো ধন্বতরী ওষুধ নয়। তবে তিনি যদি তার সূচনা বক্তব্যে অনড় থাকেন তবে তিনি নেতৃত্ব দিতে পারেন।