মানবাধিকার সংস্থা, কূটনীতিকদের হাতে গুম-খুনের তালিকা : এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৭৮ জন, গ্রেপ্তার ১৮ হাজার,আসামী ৭ লাখ
ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গত এক মাসে নেতাকর্মীদের গুম-খুনের একটি তালিকা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ বিদেশি দূতাবাসে পাঠিয়েছে বিএনপি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে তাদের সরজমিনে তদন্ত করার জন্য অনুরোধও জানিয়েছে দলটি।
গত ৫ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র্যাব ও পুলিশসহ সাদা পোশাকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে ৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা ৪৩ জন বলে দাবি করা হয়েছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বরিশালে উজিরপুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনসাধরণ রয়েছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত এক মাসে ১৮ হাজার নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলায় আসামি হয়েছেন প্রায় ৭ লাখের অধিক নেতাকর্মী। এর বাইরে মামলায় অজ্ঞাত সংখ্যাক লোককে আসামি তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। অজ্ঞাত এই তালিকায় পরবর্তিতে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
গত ৫ জানুয়ারির পর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কথিত ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যার পাশাপাশি পুলিশি হেফাজতে নেতাকর্মীদের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার কথাও তুলে ধরা হয়।
তালিকা অনুযায়ী এ পর্যন্ত হত্যার শিকার বিরোধী নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা হলেন- নাটেরের তেবাড়িয়ার রাকিব মুন্সি (বিবিএ সন্মান), রায়হান আলী (ছাত্রদল), রাজশাহীর মহানগরের আইনুর রহমান মুক্ত (বিএনপি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহাবুদ্দিন (ছাত্রশিবির), বানেশ্বরের মজিরউদ্দীন (বিএনপি), গোদাগাড়ীর মো. এসলাম (যুবদল), বিনোদপুরের নুরুল ইসলাম শাহিন (কলেজ শিক্ষক), চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের জমসেদ আলী (বিএনপি), নবাবগঞ্জের আসাদুল্লাহ তুহিন (ছাত্রশিবির), শিবগঞ্জের মতিউর রহমান (ছাত্রদল), নোয়াখালীর চৌমুহনীর মিজানুর রহমান (যুবদল), মহসিন উদ্দিন (ছাত্রদল), বেগমগঞ্জের মো. সোহেল (যুবদল), সোনাইমুড়ির মোরশেদ আলম পারভেজ (ছাত্রদল), চুয়াডাঙ্গার শঙ্করচন্দ্রপুরের সিরাজুল ইসলাম (বিএনপি)।
নড়াইলের স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস (জামায়াতে ইসলাম), ঢাকার খিলগাঁওয়ের নুরুজ্জামান জনি (ছাত্রদল), ঢাকা কলেজের এমদাদ উল্লাহ (ছাত্রশিবির), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ক্যাম্পাসের ছাত্র আরিফুল ইসলাম মুকুল (ছাত্রদল), মাতুয়াইলের সাখাওয়াত হোসেন রাহাত (ছাত্রদল), মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ভাষানটেকের আল আমীন, আগারগাঁওয়ের জসিমউদ্দিন (ছাত্রশিবির), সদর উপজেলার সোলাইমান উদ্দিন (ছাত্রদল), চট্টগ্রামের লোহাগড়ার সাকিবুল ইসলাম (ছাত্রশিবির), রাঙ্গুনিয়ার জিল্লুর রহমান ভান্ডারী (যুবদল), ভোলা সদরের আবুল কালাম (শ্রমিক), ঝিনাইদহের শৈলকুপার সুলতান আলী বিশ্বাস (শ্রমিক), চরফ্যাশনের হারুন অর রশীদ (ছাত্রদল), সাতক্ষীরার তালা’র রফিকুল ইসলাম (সাধারণ জনতা), রামনগরের শহীদুল ইসলাম (জামায়াতে ইসলাম), ময়মনসিংহের নান্দাইলের আসিফ পারভেজ টুকুন (ছাত্রদল), যশোরের চৌগাছার আবদুস সামাদ মোল্লা (বিএনপি), মনিরামপুরের মো. ইউসুফ (যুবদল), দুর্গাপুরের মো. লিটন (যুবদল), সদরের রাজু ( বিএনপি) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সাইদুল ইসলাম (জামায়াতে ইসলাম)।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণের কালা স্বপন (বিএনপি), চৌদ্দগ্রামে সাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী (ছাত্রশিবির), পিরোজপুরের বাচ্চু মিয়া (জামায়াতে ইসলাম) প্রমুখের নাম ও ঠিকানার পাশাপাশি হত্যার বিবরণ দেয়া হয়েছে।
অপহরণ ও গুমের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০ দলীয় জোটের অনেক নেতাকর্মীর সন্ধান মিলছেন না। তাদের পরিবারের সদস্যরাও নানাভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিন্তু নিরাপত্তার দিকটা বিবেচনায় রেখে ওই তালিকা দেয়া হয়নি।
এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলর চৌধুরী আলমসহ ২০১২ সালে গুম-খুনের বিষয়গুলো এতে উল্লেখ করা হয়।