চাঁদপুর: ‘দেড় ঘণ্টা আগে আইছি। ঠাক্কা-গুতা খাইছি, তয় লাইন ছাড়ি নাই। স্যার, টিভিতে যা দেখছি ওইডা সত্য অইবো তো। লটারিতে নাম উঠলে অল্প টেকাতেই সৌদি যাওন যাইবো, হুনছি।’ সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে আসা ফরিদগঞ্জের যুবক আব্দুর রহিম এভাবেই তার অনুভূতি জানালেন।
কম খরচে সৌদি আরব যেতে চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে হাজারো যুবক ভিড় করেছে। শ্রমিক হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে ওই অফিসে বুধবার দুপুরে দেখা যায় শত শত যুবকের ভিড়। গত তিন দিনে এক হাজার ৫১২ জন নিবন্ধন করলেও বুধবার নিবন্ধিত হয় হাজারেরও বেশি।
বুধবার দুপুর ১টায় চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকায় কথা হয় শামীম শেখ নামে এক যুবকের সঙ্গে। সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক শামীম কচুয়া উপজেলা থেকে এসেছেন নিবন্ধন করতে। হাতে কিছু কাগজপত্র।
নিবন্ধন করতে পেরেছেন? জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট হইলেও ফরম তুলতে পারছি। ভিড়ের মধ্যে পইড়া পায়ে আঘাতও পাইছি। অহন ফরম পূরণ কইরা প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে দেড়শ’ টেকা জমা দিয়ে ব্যাংকের পে-অর্ডার নিতে হইবো, তারপর নাকি নিবন্ধন করতে হইবো।’
নিবন্ধন করতে আসা রহিম বলেন, ‘ছোডবেলা থেইক্যাই মনের মইধ্যে অনেক সাধ আছিলো মক্কার দেশ সৌদি যামু, কিন্তু টেকার লাইগ্যা যাইতে পারি নাই। এইবার লটারিতে লাইগ্যা গেলে আমার সৌদি যাইতে পারমু।’
শুধু রহিম ও শামীম শেখই নন, তাদের মতো আরও শত শত যুবক ভিড় জমাচ্ছেন শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে। যেখানে অল্প খরচে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য নিবন্ধন চলছে। সকাল থেকেই নিবন্ধনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে থাকে মানুষ।
ফরম সংগ্রহের জন্য সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা শিল্পকলা একাডেমি এলাকায় মানুষের ভিড় দেখা যায়। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে ছাড়িয়ে বিশাল লাইন চলে যায় বাইরে। অতিরিক্ত মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। একপর্যায়ে নিবন্ধন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়ে ফরম জমা নেয়া হয়।
তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জরুরি নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে নিবন্ধনকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, এখানে তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। রেজিস্ট্রেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। নিবন্ধন-প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হালিমা বেগম বাংলামেইলকে জানান, গত তিন দিনে এখানে মোট এক হাজার ৫১২ জন ফরম জমা দিয়েছে। তবে শুধুমাত্র বুধবারই এক হাজার ৫০টি ফরম জমা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ফরম জমা নেয়া অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
সারা দেশের মতো চাঁদপুরেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরব থেকে নিয়োগকর্তা কিংবা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তাদের চাহিদাপত্র বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে দেবে। পরবর্তী সময়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন কিংবা ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হবে। নিবন্ধিত কর্মী ছাড়া কেউ যেতে পারবে না।
রিক্রুটিং এজেন্সি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দিলে ডাটাবেইস থেকে লটারির মাধ্যমে কর্মী বাছাই করা হবে। সেই কর্মীরা বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি যেতে পারবেন। নিবন্ধনের বাইরে রিক্রুটিং এজেন্সি ইচ্ছা করলেই খেয়াল খুশিমতো কর্মী পাঠাতে পারবে না।
সৌদি আরব যেতে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা খরচ হলেও এবারই প্রথম বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে বিনা পয়সায় প্রতি মাসে ১০ হাজার কর্মী যেতে পারবে। গৃহস্থালীসহ কয়েকটি খাতে এসব কর্মী কাজ পাবেন। তাদের খরচ বহন করবে নিয়োগদাতা সৌদি কম্পানি।
এসব কর্মীরা মাসে এক হাজার ২শ’ থেকে এক হাজার ৫শ’ রিয়াল (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৪ থেকে ৩১ হাজার টাকা) বেতন পাবেন। শুধু পাসপোর্ট তৈরি ও মেডিকেল পরীক্ষার খরচ বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা লাগতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।