স্থায়ী সমাধান চায় আওয়ামী লীগ

0

awmমধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের টানা অবরোধে সৃষ্ট স্থবিরতা সহসাই কাটছে না। এভাবেই দেশ পরিচালনার মনোবল সঞ্চার করতে সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশ রয়েছে। আপাতত কোনো সমঝোতা বা সংলাপে মন নেই শাসকদের। চলমান এ অস্থিরতায় মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর মদত রয়েছে দাবি করে মানবকণ্ঠের কাছে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তও তুলে ধরেন সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক। বিএনপির টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি এবং কর্মসূচিতে সংঘটিত নাশকতার মধ্য দিয়েই একটি স্থায়ী সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতাদের মতে, বিএনপি জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচি আরো স্থায়ী হবে। আর এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মাঝে একটি ‘স্থায়ী সমাধান’ হবে। তাই চলমান অস্থিরতাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অস্তিত্বের ‘লড়াই’ হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনী এ দ্বন্দ্বকে আদর্শিক উল্লেখ করে এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি স্থায়ী সমাধানও তারা চাইছেন। এর সপক্ষে আওয়ামী লীগের এক নেতা সদ্য বিতাড়িত পাকিস্তানি কূটনীতিকের কথা উল্লেখ করেন। তবে সরকারবিরোধী এসব নাশকতা খুব কৌশলী হয়ে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্তও রয়েছে শাসক জোটের। বিএনপির চলমান হরতাল-অবরোধের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মানবকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়েই দেশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। শাসক দলের নেতারা বলেন, টানা হরতাল-অবরোধই এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে এসেছে। এসব ‘জনবিরোধী’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি জোট জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর এটাকেই আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, স্থায়ী সমাধান। মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে টানা অবরোধ পালনকারী বিএনপি জোটের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনায় না বসার আগের সিদ্ধান্তে এখনো অনড় শাসক জোট। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কয়েক নীতিনির্ধারক মানবকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে দল ও সরকারের এমন মনোভাব তুলে ধরেন।

চলমান অস্থিরতার কী সমাধান ভাবছে সরকার মানবকণ্ঠের এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, স্থায়ী সমাধান আসছে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এ অস্থিরতার মধ্য দিয়েই দেশ চলবে। এভাবে টানা হরতাল-অবরোধ দিয়ে, পেট্রলবোমায় মানুষ মেরে বিএনপি ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশে নাশকতাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এমনিই এর স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে।

চলমান অস্থিরতাকে ‘আদর্শিক’ বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নীতিনির্ধারক। তিনি তার বক্তব্যের সপক্ষে সদ্য ‘বিতাড়িত’ পাকিস্তানি এক কর্মকর্তার সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা মানবকণ্ঠের কাছে উল্লেখ করেন। আওয়ামী লীগের এ সূত্রটি জানায়, ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খানের সঙ্গে বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি বড় যোগসূত্র সরকারের হাতে ধরা পড়ার পরই তাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়। ওই নেতা বলেন, এ ভরসাতেই মূলত খালেদা জিয়া তার বাসা ছেড়ে কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের এ সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন জঙ্গি কানেকশন, সরকার ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্কের ভাঙন ধরানো, সরকারবিরোধী এসব আন্দোলনের নামে নাশকতায় অর্থায়নও করত মাযহার। জানা যায়, এসব ঘটনা টের পেয়েই নড়েচড়ে বসে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। তাই তারা শেখ হাসিনাকেই ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্য নিরাপদ মনে করে তাকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

নাগরিক সমাজের একটি অংশের সংলাপ উদ্যোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের ইচ্ছা এক ও অভিন্ন। সবাই ‘হাসিনা মাইনাস’ বাংলাদেশ চান। তাই বিএনপি নেত্রীকে তারা সমবেদনা জানাতে যান, কিন্তু বার্ন ইউনিটে যান না। আবার সুশীল হয়ে সংলাপের কথাও বলেন।

বিএনপির এ টানা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কর্মকৌশলও হচ্ছে ‘স্থায়ী সমাধান’কে ঘিরে। শাসক দলের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের কৌশল হচ্ছে বিএনপিকে দেশ-বিদেশে নাশকতাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা। বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জনমত গঠন করা। তাদের জনরোষের মুখে ফেলা ও জনগণকে ধৈর্য ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ করা। তবে এ সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো মাঠে কর্মসূচি পালন করতে চাইলে তাদের সে সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্তও রয়েছে সরকারের। দল ও সরকার যৌথভাবে এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বর্তমানে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে সরকার। এসব পরিকল্পনায় সফলতা পাওয়ার আশা করছে তারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিএনপি অবরোধ তুলতে বাধ্য হবে। অন্যথায় তাদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ‘এক্সিট রুটও’ তৈরি করে দেয়া হবে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

নাশকতাবিরোধী জনমত গঠনেও আওয়ামী লীগ তৎপর রয়েছে। ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর নাশকতাবিরোধী অবস্থান কর্মসূচিকে ভালোভাবে নিচ্ছে সরকার। এর পাশাপাশি নাশকতা ও পেট্রলবোমার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। গত রোববার ঢাকার গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী নাশকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ মানববন্ধন হয়েছে। একই কর্মসূচি হয়েছে সারাদেশেও। শাসক জোটের নেতারা নাশকতার বর্ণনা দিয়ে সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। জেলায় জেলায় শান্তি মিছিল কর্মসূচি হচ্ছে। গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় শান্তি সমাবেশ হয়েছে। এর আগে নাশকতায় আক্রান্ত এলাকা রংপুরের মিঠাপুকুর ও গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ১৪ দল নেতা মোহাম্মদ নাসিম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বিশাল জনসভা করে এসেছেন। এসব সভায় খুব জনসমাগমও হয়েছিল। এরপর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও অনুরূপ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশ থেকে জনগণের কাছে দলীয় লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বর্ণনা ও সরকারের উন্নয়নের কথা রয়েছে। জনমত গঠনের লক্ষ্যে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে এ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে সরকারি জোট। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপিকে নাশকতাকারী হিসেবে চিহ্নিত করতেও কাজ শুরু করেছে সরকার। বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও বিভিন্ন মাধ্যমে চিঠি চালাচালি চলছে। কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। সরকারের শীর্ষ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির নামে যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটছে কূটনীতিক মহলে তা তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিদিন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতা দেশের কূটনীতিকরাও এসব নাশকতার বিরুদ্ধে কথা বলছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মানবকণ্ঠকে বলেন, নাশকতা বন্ধ করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ওপর দেশবাসীর আস্থা রয়েছে। আমার বিশ্বাস জনগণের এ আস্থায় চিড় ধরবে না। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জানান, সরকার জনগণের সম্পৃক্ততাও আশা করছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More