আবারও ডিগবাজীর কথা ভবছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। এজন্য তিনি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। নজর রাখছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের দিকেও।
জাপার নীতি নির্ধারণী মহল থেকে জানা গেছে, দুই দলের মধ্যে যার পাল্লা ভারী হবে সেদিকেই ঝুঁকবেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। সময় মতো আবারও ডিগবাজী দিতে পারেন তিনি। তবে তার ডিগবাজীর পুরোটাই নির্ভর করছে বিএনপি জোটের চলমান আন্দোলনের ওপর।
এ আন্দোলন সফল না হলে তিনি বর্তমান সরকারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেবেন। সাথে বিএনপি জোটের বিরুদ্ধে আগের মতই সমালোচনায় মুখোর থাকবেন। আর যদি বিএনপির আন্দোলন সফল হয়, সরকার নির্বাচন দিতে সম্মত হয়-এক্ষেত্রে তিনি আগে বাগেই সকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন।
চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপি জয়ী হচ্ছে টের পেয়ে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়বেন।
বিষয়টি পরিস্কার হয় গত ৪ জানুয়ারি বিকালে। যখন সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচী নিয়ে টান টান উত্তেজনা। একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস অন্যদিকে বিরোধী জোট ২০ দলের পক্ষ থেকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস পালনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন।
ওই দিন বিকেলেই সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ঘোষণা দিলেন ৫ জানুয়ারি সকালে সংবাদ সম্মেলন করবেন। যে দিন ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ হওয়ার কথা।
৫ জানুয়ারি সকালে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিলেন- যেকোন মুহূর্তে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা মন্ত্রীসবা থকে পদত্যাগ করবেন। তবে কখন বা কোন দিন পদত্যাগ করবেন তা পরিস্কার করেন নি তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে- একটি সাউন্ড ছড়িয়ে দিয়েছেন এরশাদের দল। যতে করে সরকার বেকায়দায় পড়লে ২০ দলের রোষাণলে না পড়তে হয়। আর পদত্যাগের সময় নির্ধারণ করেননি কারণ-২০ দলেন আন্দোলন সফল না হলে, সরকার যাতে দূরে ঠেলে না দেয়।
দলটির এক প্রভাবশালী নেতা জানান, দু’দলের লড়াইয়ের ওপর যেকোনো সময় জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটতে পারে। তবে আন্দোলনের চূড়ান্ত ফলের আগে তিনি কোনো ঝুঁকি নেবেন না। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে আজও মাসুল দিতে হচ্ছে ।
জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির টানা আন্দোলন শুরুর পর দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে আ. লীগ ও বিএনপির সঙ্গে সমান তালে যোগাযোগ রাখছেন এরশাদ।
দলের জেষ্ঠ নেতা ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ক্ষমতাসীন দল আর ছোটভাই জিএম কাদের, মেজর (অব.) খালেদ আখতার ও বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য এরশাদ নিজ দলের নেতা ছাড়াও বিএনপি জোটের শরিক দল কাজী জাফরের জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।
সূত্র জানায়, সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত দলটির দুই শীর্ষ নেতা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি তলে তলে বিএনপির সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। আগের মতই পার্টির চেয়ারম্যানকে তাদের ওপর নির্ভরশীল রাখতেই তাদের এ কৌশল। দশম সংসদ নির্বাচনেও এই দুই শীর্ষ নেতা এরশাদকে আ. লীগের অধীনে নির্বাচনে আনতে বাধ্য করেছিলেন।
এর মধ্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সাবেক বিএনপি নেতা এবং খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা ছিলো।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এরশাদ কিছুটা কৌশল পাল্টেছেন। কিছুদিন আগেও তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানের সমালোচনা করলেও ৫ জানুয়ারির পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য দেননি। বরং আ. লীগ ও বিএনপি জোটের পাল্টাপাল্টি লড়াই এবং বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সবাইকে এক টেবিলে বসার আহবান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি এক এক বিবৃতিতে এরশাদ বলেন, দেশে আবার চরম রাজনৈতিক সংঘাত, অস্থিরতা হানাহানির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নতুন বছরের শুরু থেকেই এই সংঘাতের রাজনীতি শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, একদিকে হরতাল অবরোধের অপরাজনীতি অন্যদিকে বিরোধী দলের ওপর সরকারের মারমুখী আচরণ।
জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, রাজনৈতিক পরিস্থতি কোন দিকে মোড় নেয় তা পুরোপুরি পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান নিজের অবস্থান পরিস্কার করবেন না। এ কারণে সম্প্রতি তিনি শান্তি সমাবেশও করেছেন।
দলের আরও এক প্রেসিডিয়াম সদস্য দাবি করেন, তারা পরিস্থতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আন্দোলনে যারা জিতবে তারা তার পক্ষেই যাবেন।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষণের আহবায়ক সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা বলেন, দেশের মানুষ এখন সহিংসতার রাজনীতি চায় না। তারা এখন পরিবর্তন চায়। তারা পরিবর্তনের পক্ষে শান্তির পক্ষে।
ইতোমধ্যে দলের চেয়ারম্যান একটেবিলে বসার আহবান জানিয়েছেন।