ঢাকা: সুশীল ও নাগরিক সমাজের জাতীয় ঐকমত্য কিংবা জাতীয় সংলাপ ও জাতীয় সনদ রচনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আ্হমেদ রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, “বিশ্ব স্বীকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ও দৃঢ় ভিত্তির ওপর নবনির্মাণের জাতীয় স্পৃহা পূরণে আজ সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য, জাতীয় সংলাপ ও জাতীয় সনদ রচনার যেকোনো উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।” তিনি বলেন, “ক্ষমতায় আরোহণের জন্য নয়, বরং স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ, উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করার অদম্য বাসনা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র মুক্তির চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। শত জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়নসহ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে তিনি প্রস্তুত।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল ভিত্তি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে জনগণের অভিব্যক্তিকে চূড়ান্ত রূপদানের লক্ষ্যে জাতীয় সনদ রচনা ও প্রয়োজনে সংবিধান পুনর্লিখন বর্তমান সময়ের দাবি। জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক পরিবর্তনের এই সুযোগকে অবশ্যই জনস্বার্থে ফলপ্রসূ করতে হবে। প্রত্যেক সৃষ্টির এবং বিজয়ের প্রসব বেদনা থাকে, সমগ্র জাতি আজ কষ্টসাধ্য বেদনাকে স্বীকার করেই প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর।”
পোশাকশিল্প মালিকদের অনশন কর্মসূচিতে ব্যবসায়ী নেতাদের পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল ও ট্যাক্স প্রদান বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারিকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “অগণতান্ত্রিক অবৈধ সরকারকে রাজস্ব প্রদানের বৈধতা থাকতে পারে না।”
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, শনিবার ২০ দলীয় জোটের বিক্ষোভ মিছিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ আক্রমণ চালায় এবং বিরোধীদলীয় অনেক নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেফতার করে।
ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে হত্যা-নির্যাকতনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “পল্লবী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলমকে পুলিশ তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় খোঁজ নেয়া হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে, কিন্তু ৫ দিন পর গতকাল নুরে আলমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
“শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে পুলিশি ক্রসফায়ারে ছাত্রদল নেতা আরিফকে হত্যা এবং গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে রুবেল, সোহেল, নুরুল হাকিম ও পারভেজকে।” তাদের প্রত্যেককে পুলিশ বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। আমরা এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং বিচার দাবি করছি।”
সালাহ উদ্দিন বলেন, “বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন-পীড়ন করেই ক্ষান্ত নয়, বরং গণ-আন্দোলনকে কলুষিত করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ঘৃণ্য অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার। বিরোধী দল ও ভিন্নমত দমনের এহেন ঘৃণ্য ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল।
“আমরা বিশ্বাস করি, গণহত্যা, গণগ্রেফতার, অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন এবং পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের পৈশাচিক তাণ্ডব অবৈধ সরকারের মসনদ রক্ষা করতে পারবে না, বরং নির্মম পতনকে ত্বরান্বিত করবে।”
বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মুক্তির চলমান সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে বিবৃতিতে ঘোষণা দেয়া হয়।