সুযোগ নিচ্ছে হিযবুত, সহযোগিতায় ১৫ প্রবাসী

0

tahrir02 ঢাকা: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। নতুন নতুন কৌশল নিয়ে তারা নতুন উদ্যোমে সক্রিয় হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে মোবাইল ফোনে কথা না বলে এসএমএস, ই-মেইল ও ফেসবুকে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষায় ব্যবহার করছে স্কাইপে, গুগল টক এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে তারা।

প্রকাশ্য তৎপরতার অংশ হিসেবে ঝটিকা মিছিল, বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে মিছিল, ক্ষুদ্র জমায়েত, লিফলেট বিলি প্রভৃতি কৌশল নিচ্ছে হিযবুত তাহরীর। আর সাতটি দেশে থাকা অন্তত ১৫ জন প্রবাসী অর্থ সহায়তা দিয়ে সংঘঠন চাঙা রাখতে সহযোগিতা করছে।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে হিযবুত তাহরীরের সক্রিয়তার এসব তথ্য জানা গেছে। গত মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ওই প্রতিবেদন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে হিযবুত। গত মাসে এ সংগঠনের আট কর্মীকে লিফলেট ও বিভিন্ন ধরনের বইসহ আট করা হয়েছে।

দায়িত্বমীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘হিযবুত তাহরীরের মূল নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি থাকা সত্ত্বেও তার সহযোগীরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তাদের বিলিকৃত লিফলেট ও পোস্টার পর্যালোচনা দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই মূলত তাদের বিষোদগার। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এবং ধর্মপ্রাণ মোসলমানদের উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে তারা। বর্তমানে দেশব্যাপী অবরোধ নাশকতার সুযোগে হিযবুতও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে চাইছে। এমন তথ্য পেয়ে সতর্ক করা হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকে।’

সূত্র জানায়, মূলত নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় এখন অস্তিত্ব জানান দিতেই নানা কৌশল নিচ্ছে হিযবুত তাহরীর। প্রকাশ্যে কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ থাকলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঠিকই সংগঠিত হচ্ছে।

একটি সূত্রের দাবি, হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের সক্রিয় কর্মী ও নেতাদের মোবাইল ফোনে আড়িপাতা হয়। এ কারণে তারা এসএমএস, ই-মেইল ও ফেসবুকে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিরোধী নানা স্লোগান দিচ্ছে। তারা বলছে- আমরা গণতন্ত্র বিরোধী, খিলাফতের সৈনিক, গণতন্ত্র নিপাত যাক, খিলাফত মুক্তিপাক। এ ধরনের প্রচার চালাচ্ছে তারা। তারা বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনকে উসকে দেয়ারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, লেবাননভিত্তিক হিযবুত তাহরীর কেন্দ্রীয় মিডিয়া অফিস থেকে বিশ্বের কয়েকটি ভাষায় প্রচার করা হয়। সেখান থেকে হিযবুত তাহরীর উলাইয়া পাকিস্তান, হিযবুত তাহরীর মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের দলীয় ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ নিয়ে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকে। দেশে নেতাকর্মীরা মেধাবী ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের নিয়ে এসব কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।

উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। এরপর সরকারকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিতে থাকেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। পাশাপাশি চলে বিবৃতি আর পোস্টারিং। এমনকি তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্য মিছিল-মিটিংও চালায়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করলে টনক নড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। গ্রেপ্তার করা হয় সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহম্মদ, যুগ্ম সমন্বয়কারী কাজী মোরশেদুল হক, সিনিয়র উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মাওলাসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে।

tahrir03গোলাম মাওলাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী জামিনে মুক্তি পাওয়ায় সংগঠনটি পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, সাতটি দেশের অন্তত ১৫ জন প্রবাসী হিযবুত তাহরীরকে অর্থসহ নানাভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটের আবদুর রহিম, রাজি আল হোসাইন, মোহাম্মদ ফয়সাল, জমির আলী, সৌদি আরব প্রবাসী জুলহাস মিয়া ও আবদুল্লাহ আল নোমানী, পাকিস্তানি নাগরিক আবিদুর রহিম, হংকং প্রবাসী ইসরাক আহম্মদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জুলফিকার, রিয়াজ উদ্দিন ও মিসর প্রবাসী বাদশা অন্যতম। তারা মাঝেমধ্যে দেশে এসে হিযবুতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে যান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে মহানগর পুলিশ সজাগ আছে। গত ২৪ জানুয়ারি ৫ জন, ২৬ জানুয়ারি একজন এবং ৩০ জানুয়ারি দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More