যশোরে উদীচী ট্র্যাজেডির ১৬ বছরপূর্তি: বিচার না পেয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্তরা

0

atnewsbd6.3.15.43আজ ৬ মার্চ, উদীচী ট্র্যাজেডির ১৬ বছরপূর্তি। যশোরের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাযঞ্জের কালে দিবস। দীর্ঘকাল পার হলেও চাঞ্চল্যকর হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে বিচার করা সম্ভব হয়নি। গোজামিলের তদন্তের কারণে এ মামলায় একবার সকল আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে। আর সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল হয়েছে চার বছর, যা এখনও ফাইলবন্দি। তাই এ বিচার নিয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্তরাসহ বিবেকবান যশোরবাসী। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে আজ নানা কর্মসূচি পালন করবে উদীচী যশোর।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতে যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে চালানো হয়েছিল ভয়াবহ বোমা হামলা। সন্ত্রাসীদের সেদিনের তান্ডবে জীবন হারিয়ে ছিলেন ১০ জন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। ওই দিন উদীচীর অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন নাহিদ। ভয়াবহ সেই বোমা হামলায় তিনি হারিয়েছেন দুটি পা। ¯িপ্রন্টারের আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। সেই আঘাতের কারণে স্বাভাবিক মানুষের মত কাজ করতে পারেন না তিনি। কিছু দিন একটি চায়ের দোকান চালালেও সমস্যার কারণে সেটি ভাড়া দিয়েছেন। বিয়ে করেছেন, হয়েছেন এক সন্তানের জনক। দু’পা বিহীন নাহিদ প্রতিনিয়ত চলছেন এক অনিশ্চিত যাত্রার মধ্য দিয়ে। নাহিদ বলেন, দেখতে দেখতে ১৫টি বছর পার হয়ে গেল। কিন্তু সেদিন কারা বোমা রেখে এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তা আজও জানা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রতিটি মুহূর্তে কষ্ট অনুভব করি।

যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। কেউ বুঝতে পারবে না। এর বাইরে আমাদের আর কিই বা করার আছে। তবে এ হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু বিচার দেখতে পেলে খুশি হতেন বলে তিনি জানান । তিনি আরো বলেন, ওই ঘটনায় নিহত আহতদের নানাভাবে পুনর্বাসন করেছে উদীচী এবং সরকার। কিন্তু পঙ্গুত্ব বরণ করার পর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক লাখ টাকা ছাড়া কিছুই মেলেনি তার ভাগ্যে। কিন্তু তাতে কি হয়। প্রতি দু’বছর পর পর প্লাস্টিকের পা ভেঙ্গে যায়। তা নতুন করে তৈরি করতে ২০ হাজার টাকা করে লাগে। এ অবস্থায় একটি চাকরি দাবি করেছিলাম। কিন্তু কেউ সহানুভূতি দেখিয়ে এগিয়ে আসেনি। তিনি আরো বলেন, কষ্টেতো আছি, সে কষ্ট আরো বাড়িয়েছে বিচার না পাওয়ার বেদনা। এ দেশে ৫০ বছর পর বিভিন্ন ঘটনার বিচার হচ্ছে। তাহলে আমাকে যারা পঙ্গু করলো তাদের বিচার কেন হবে না। প্রধানমন্ত্রী কী আমাদের দুঃখ দুদর্শা দেখেন না ? দেরিতে হলেও তিনি জঘন্য এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন। পঙ্গুত্ববরণকারী সাংস্কৃতিক কর্মী সুকান্ত দাস বলেন, আমার দৃষ্টিতে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হিমাগারে চলে গেছে। আমরা বোধ হয় আর বিচার পাবো না। তিনি আরো বলেন, খেলা করতে ভালোবাসতাম। সেদিনের ঘটনার পর পা হারিয়ে প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছি। খেলতে ইচ্ছে জাগলে সে কষ্ট আরো বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ১৬ বছর কেন ৩৬ বছর কেটে গেলেও যেন এ ঘটনার বিচার হয়। উদীচী যশোরের সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বিচার চেয়ে আসছি। আমাদের সকল অনুষ্ঠানে এ হত্যাযজ্ঞের বিচার অন্যতম দাবি থাকে। কিন্তু আজও বিচার পাইনি। নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের সঠিক বিচার হলে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন হতো। তাহলে আর রমনা, ছায়ানট, সাতক্ষীরার মেলাসহ বড় বড় বোমা হামলার ঘটনা ঘটতো না। এজন্য তিনি নাশকতাকারীদের রুখতে সব বোমা হামলার ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার কামনা করেন। সরকারি কৌসুলি রফিকুল ইসলাম পিটু বলেন, বর্তমান সরকার ন্যায় বিচারের স্বার্থে উদীচী মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে উচ্চ আদালতে দুটি আপীল করে। দুটি আপীলই গৃহিত হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা যশোর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। উচ্চ আদালতে মামলা দুটি শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই উদীচী মামলা পুনবিচারের রায় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি ।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে উদীচী হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর এ ব্যাপারে পৃথক দুটি মামলা হয়। প্রথমে কোতোয়ালী পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডির ওপর ন্যস্ত হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় প্রদান করেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ হামলার সাথে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর উদীচী ও সরকার রায়ের বিরুদ্ধে দুটি আপীল করে।এদিকে দিবসটি উপলক্ষে উদীচী যশোর আজ সকাল সাড়ে ৯ টায় সংগঠন প্রাঙ্গনে রক্তদান কর্মসূচি, সাড়ে ১০টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বিকেল ৪টায় টাউন হলে আলোচন সভা, প্রতিবাদী গান ও সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ স্মারকে আলোক প্রজ্জ্বালন কর্মসূচি পালন করবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More