বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্ব হচ্ছে নক আউট পর্ব। হউক সেটা ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা হকির বিশ্বকাপ। প্রথম পর্বতো অনেকটা ড্রেস রিহার্সেলের মত। যেখানে কারা বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে সে নিয়ে আগাম কিছু বলাও যায় না। কিন্তু নক আউট পর্বটা এমনই স্নায়ী ক্ষয়ী যে এর উত্তাপ শরু হয় প্রথম পর্বে খেলা দল গুলোর নক আউট পর্বের প্রতিপক্ষ ঠিক হওয়ার সাথে সাথে। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ন হয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস উন্মাদনার কমতি নেই।
কিন্তু প্রতিপক্ষের নাম যখন ভারত তখন মনে মনে একটু শংকা ভির করবেই। কারণ মাঠ এবং মাঠের বাইরের সবকিছুই যে ক্রিকেটের এই বড় মোড়লদের অধীনস্ত হয়ে আছে। বিশ্বকাপের বানিজ্যের কথা ভেবে এ ম্যাচে আম্পায়াড়রাও থাকতে পারে টাইগারদের বিপক্ষে। তাই বলে ভীত নয় টাইগাররা। বরং কিছু ইতহাস ও পরিসংখ্যান কথা বলছে বাংলাদেশের হয়েই।
কারণ ইতিহাস বলছে মাইলফলকের ম্যাচে বাংলাদেশ কখন হারেনা। আর প্রতিপক্ষ যদি ভারত হয় তাহলে তো কথাই নেই। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশর প্রথম জয়টি আসে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে। দ্বিতীয় জয়টি আসে ১৫০ তম ম্যাচে। তৃতীয় জয়টি আসে এশিয়া কাপে ২০১২ সালে। আর চতুর্থ জয়টি? সেটা হতে পারে কোয়ার্টার ফাইনালেই। কারণ ১৯ মার্চ কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ খেলবে নিজেদের ৩০০ তম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তাই এতবড় একটা মাইলফলকের ম্যাচে টাইগাররা অবশ্যই জয় নিয়ে আসবে।
অন্য দিকে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে বারবার স্মৃতির পাতায় পেছনে ফিরে যাচ্ছেন সাকিব-তামিম-মুশফিক আর মাশরাফি। কারণ সেই বিশ্বকাপে ভারতকে কাঁদিয়ে বিদায় করে দেওয়া ম্যাচটি ছিলো এমনই এক সময়ে যার মাত্র দুদিন আগে সড়ক দূর্ঘটনায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন মানজারুল ইসলাম রানা। মাশরাফির খুব কাছের একজন বন্ধু ছিলেন তিনি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে প্রতিপক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়েন মাশরাফি। ম্যাচের প্রথম ওভারেই শেবাগের মিডল স্টাম্প উপড়ে ফেলে সেই যে ধ্বংসজ্ঞ শুরু করেছিলেন যার শেষ হয় মুশফিকের জয়সূচক কভার ড্রাইভে।
আবারও ফিরে এসেছে মানজারুল রানার স্মুতি। আবারও সমানে ভারত। এবার বাংলাদেশের নেতৃত্বে রানার সবচেয়ে কাছের বন্ধু মাশরাফি। অন্যদিকে ভারতের মিডিয়াতে বাংলাদেশকে নিয়ে মওকা মওকা ব্যাঙ্গাত্বক যে বিজ্ঞাপণটি বানিয়েযেছে সেটিও তাতিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। তাছাড়া ব্যাক্তিগত কিছূ হিসেব নিকেশও আছে তামিম ও মুশফিকের। তামিমকে ডেকে নিয়ে পুরো আইপিএলের সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখা আর অন্যদিকে এশিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও আইপিলে উপেক্ষিত থকার একটা জবাবও দিতে পারেন মুশফিক।
এছাড়া দল হিসেবেও বাংলাদেশ আছে দারুণ ছন্দে। সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, নাসির- যাদের সবাই আবার ফর্মেও রয়েছেন। শুরতে তাই একটু ভালো কিছুর প্রার্থনা। ভারতের বিপক্ষে সবসময়ই তামিমের ব্যাট হাসে বলে তামিমকে নিয়ে দুশ্চিনারও তেমন কিছু নেই। আর বোলিংয়ে মাশরাফি-রুবেল-সাকিব -তাসকিন ম্যাচে ৪০ ওভার বেশ ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। বাকি থাকে ১০ ওভার? সেজন্য রিয়াদ-নাসির-সৌম্যর উপর যে আস্থা রাখাই যায় তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। সব মিলিয়ে ভারতকে মাঠে জবাব দেয়ার জন্য ফুরফুরে মেজাজেই আছে টাইগাররা।
অন্যদিকে বিশ্বকাপের এমন একটা তাৎপর্যপূর্ন ম্যাচের আগে ইতিহাসও কথা বলছে বাংলাদেশের হয়ে। আশা করি ১৯ মার্চে ১৬ কোটি বাংলাদেশির প্রার্থনা বিফলে যাবেনা। ভারতও পেয়ে যাবে তাদের অবজ্ঞা করার সেরা শাস্তি।