ঢাকা: মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) ১৯ মার্চ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শুধু ভারতই নয়, আইসিসিও। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়! এমন কথা শুনলে যে কারও অবাক হওয়ারই কথা। আইসিসি কিভাবে আবার প্রতিপক্ষ হয়! আইসিসি তো সব দলের পক্ষে, নিরুপেক্ষ।
তাহলে শুনুন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ এবং ত্রি-দেশীয় সিরিজে যথেষ্ট নাকাল হতে হয়েছে ভারতকে। ত্রি-দেশীয় সিরিজের ফাইনালই খেলতে পারেনি তারা। অথচ, সেই দলটিই কি না বিশ্বকাপে এসে আমুল বদলে গেল! রহস্য খুঁজতে গিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বিশ্বকাপে ভারতকে অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছে আইসিসি!
অভিযোগটা এতদিন বায়বীয়ই ছিল। কিন্তু ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির ভূমিকা সত্যিই প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল, যখন দেখা গেলো ভারতেরই প্রভাবে কোয়ার্টার ফাইনালের সূচীতে পরিবর্তন আনা হলো। বিশ্বকাপের জন্য সূচী নির্ধারণ করা হয়ে গিয়েছিল অন্তত এক বছর আগে।
সেই নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী ২১ মার্চ শনিবার ‘এ’ গ্রুপের চার নম্বর দল হিসেবে ওয়েলিংটনে খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। মেলবোর্নে খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া আর পাকিস্তানের। সিডনিতে খেলার কথা নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এছাড়া অ্যাডিলেড ওভালে মুখোমুখি হওয়ার কথা দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলংকার।
কিন্তু ভারতের সুবিধার্থে আইসিসি আমুল বদলে দিল কোয়ার্টার ফাইনালের সূচী। ভারতের ইচ্ছা, মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে তারা। সে ইচ্ছা পূরণ করতেই ভেন্যু এবং তারিখ পরিবর্তন করে দেওয়া হলো। পরিবর্তিত সূচী অনুযায়ী মেলবোর্নেই ভারতের মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে।
যে কোন ভেন্যুতে বাংলাদেশের খেলতে কোন ভয় নেই। কিন্তু ভয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো, ভেন্যু পরিবর্তনের মত আর কী কী অনৈতিক সুবিধা ভারতকে দিতে পারে আইসিসি। ভারতের চাহিদামত উইকেট তৈরী করাই হতে পারে সবচেয়ে বড় অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার একটি বিষয়। যেটা বিশ্বকাপের প্রথম থেকেই ধোনিদের জন্য করে আসছে ক্রিকেটের শাসক সংস্থা।
১০ মার্চ গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ওয়েলিংটনে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। ওই ম্যাচের আগেই আইসিসির পক্ষ থেকে ওয়েলিংটনের পিচ কিউরেটর কার্ল জনসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ভারতের ব্যাটিং উপযোগী উইকেট তৈরী করতে। কার্ল জনসন নিজেই তখন সংবাদ মাধ্যমে স্বীকার করেছিলেন, ‘আইসিসি আমাদের বলেছিল ভাল ব্যাটিং ট্র্যাক তৈরি করতে। যেসব পিচে সিম মুভমেন্ট প্রায় থাকবেই না। টার্নও কম হবে। এখানে যে দুটি ম্যাচে হলো, তা নিয়ে আইসিসি খুশি।’
মেলবোর্নেও যে তেমন কিছু ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কোনমতেই দেওয়া যায় না। কারণ, আইসিসি চলে ভারতের কথায়, ভারতের অর্থে। তারা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই কাজ করবে বিশ্ব ক্রিকেটের শাসক সংস্থা। আবার আইসিসি এটাও চাইতে পারে, বাংলাদেশের কাছে হেরে যদি ভারতের বিদায় হয়, তাহলে তাদের বিশাল বাণিজ্যের জায়গাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তারা। যেভাবে ২০০৭ বিশ্বকাপে হয়েছিল, ভারতের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের কারণে।
সুতরাং, বাণিজ্যের খাতিরে হোক, ক্ষমতার দাপটে হোক আর বিসিসিআইর আর্থিক জোরে হোক, মেলবোর্নে আইসিসি যে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অন্তত, বিশ্বকাপের এ পর্যন্ত ভারতের হয়ে আইসিসির নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের পর এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।