সেনাবাহিনী জনগণের জন্য নয় কী?

0

Army Bangladeshক্রমেই বেড়ে চলেছে নির্বাচন কমিশনের ওপর অভিযোগের মাত্রা। গত দুই সপ্তা ধরে কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রায় সবগুলোই সচেতন মহলে প্রশ্নবিদ্ধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে তিন সিটিতে নির্বাচন চলাকালে সেনা মোতায়েনের যে দাবি উঠেছে তা নিয়ে ইসি’র পদক্ষেপ এ সংশয়ের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিক থেকেই দাবি করে আসছিলেন সেনা মোতায়েনের। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই এ অবস্থান থেকে পিছু হটে ইসি।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ইসিতে যে ক’টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিলো তার সবগুলো বৈঠকেই বেশিরভাগ কর্মকর্তা সেনা মোতায়েনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অবশ্য পুলিশ ও র‌্যাব-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বরাবরই সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাছাড়া সরকার তো কোনো ক্রমেই সেনা মোতায়েন করতে রাজি নয়। এ অবস্থায় মাঠে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলেও দ্রুত সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইসি।

গত রোববার বিকেলে কমিশনের এক জরুরি সভায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিন অর্থাৎ ভোটের দু’দিন আগে ও একদিন পরে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে, এমন সিদ্ধান্ত ছিলো। কয়েক দফা বৈঠকের পরই এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানান, স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন সিটিতে সেনা মোতায়েন থাকবে। যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে-নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর আগে সেনা মোতায়েন নিয়ে নাটকীয়তা চলে নির্বাচন কমিশনে। ১৯ এপ্রিল ইসির সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক হয়। ওই দিন বিকেলে কমিশনাররা একটি বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ২৬ থেকে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে একমত হন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের দুইজন মতামত দেননি। তবে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ শুরু থেকেই সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন।

সর্বশেষ, ইসির নির্বাচন পরিচালনা বিভাগ-২ এর উপ-সচিব মো. সামসুল আলম স্বাক্ষরিত সংশোধিত চিঠি সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে পাঠানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়ে একইভাবে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তবে সেখানে সেনানিবাসে সেনাসদস্যদের অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। নতুন চিঠিতে এই বাক্যটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে এভাবে যে, তারা (সেনাবাহিনী) মূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।

এ প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের সেনা মোতায়েন নিয়ে করা আচরণে প্রার্থীরা কমিশনের প্রতি আস্থা হারাবে। তিনি আরো বলেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনেও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ছিল সেনা সদস্যরা। কিন্তু তাদের ব্যবহার করা হয়নি। পরে উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতা হয়েছিলো। কিন্তু ইসি এর দায় নেয়নি।

এবারও যদি একই পদক্ষেপ নেয়া হয়, আর অনিয়ম ও সহিংসতা হলে এর দায় ইসিকে নিতে হবে বলেও এ নাগরিক নেতা মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন নিয়ে খেলা করছে। সেনা যদি ব্যবহার করতে হয় তবে, তাদের সেনানিবাসের বাইরে রাখতে হবে। সেনা মোতায়েন নিয়ে জনগণের চোখে ধুলা দেয়ার কোনো দরকার নেই বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে আজ শুক্রবার আবারও নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ক্যান্টনমেন্টে বসে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে জনগণ ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘেœ যেতে পারবে। আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তি মিশনে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। তাহলে কেন তারা দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না?

বিএনপির পক্ষে সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) আ স ম হান্নান শাহ রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহল ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর পাশে সেনাবাহিনীর অবস্থানের দাবি করেছেন। তিনি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপ মানুষের মন ভোলানোর জন্য। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নয়। কোন কেন্দ্রে গ-গোল লাগলে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা।

এদিকে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নেয়া পদক্ষেপে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। ভোটাররা এখনো সংশয়ের মধ্যে রয়েছে, তারা কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোট দিতে পারবেন কী না। তাছাড়া সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা ছাড়া বাকী প্রায় সব প্রার্থীরাই সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখার পক্ষে। এরআগে সিইসির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় বেশির ভাগ প্রার্থীই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন।

স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, সেনাবাহিনী কার জন্য, জনগণের জন্যই তো? দেশের আপামর জনগণ মনে প্রাণে চায়, সেনাবাহিনী মাঠে নামুক, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা রাখুক। যাতে মানুষ নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, ভোট দিতে পারে। তাহলে সেনাবাহিনীকে কেন মাঠে নামতে দিচ্ছে না ইসি, কার স্বার্থে? সরকারের স্বার্থে? সরকার কি চায়?

সূত্রঃ শীর্ষ নিউজ ডটকম

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More