ভোটের দিন মোহাম্মদপুর ‘লিখে দিন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে’

0

Election4মোহাম্মদপুর থেকে: সকাল থেকেই খবর আর খবর। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবরজুড়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর গুলি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ভোটগ্রহণ। তারপর চলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণনা। আর ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা মোহাম্মদপুরের পরিবেশ ছিল থমথমে।

ওয়ার্ড ৩০: গুলি বিনিময়
সকাল থেকে পুরো ওয়ার্ডজুড়ে ছিল থমথমে পরিবেশ। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই মুখোমুখি অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আরিফুর রহমান তুহিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হাসেম হাসুর সমর্থকরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ দ্রুত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনে। হঠাৎ করে বেলা আড়াইটার দিকে আদাবর ৫ নম্বর রোডের ভোট কেন্দ্রে আরিফুর রহমান তুহিন ২৫-৩০ জন সমর্থক নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে অপর প্রার্থী হাসুর সমর্থকরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে পুলিশ ও তুহিনের সমর্থকরা হাসুর সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ করেছে হাসুর সমর্থকরা। সে সময় হাসুর সমর্থকরা পিছু হটলেও ১০ মিনিট পর সংঘবদ্ধভাবে তারা পুলিশ ও তুহিনের সমর্থকদের ধাওয়া করে। হাসুর সমর্থকরা রাম দা, চাপাতি, ছোড়া, রড ও লোহার পাইপ নিয়ে প্রতিপক্ষ তুহিনের সমর্থকদের ধাওয়া করে। প্রতিপক্ষদের ধাওয়ায় পিছু হটে আশেপাশের বিভিন্ন বাসায় অবস্থান নেয় তুহিনের সমর্থকরা। সব মিলিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এ সময় ভয়ে ওই কেন্দ্রের সাধারণ ভোটারও কেন্দ্র ত্যাগ করে। পুরো পরিবেশ তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। প্রায় পৌণে এক ঘণ্টা হাসুর কর্মী-সমর্থকরা আদাবর ৫, ৬, ৭ নম্বর ও বায়তুল আমান হাউজিংয়ের অধিকাংশ এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এর কিছুক্ষণ পর র‌্যাব, বিজিবি ও আর্মস পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম উপস্থিত হয়ে লাঠিপেটা করে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বিষয়টি সম্পর্কে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ওয়ার্ড ৩১: ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ
উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকার দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী এসএম ইমতিয়াজ খান বাবুল ও তার কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ এনেছেন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টু।

মঙ্গলবার দুপুরে সেন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেঙ্গলি মিডিয়াম স্কুল ও মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র বাবুল ও তার সমর্থকরা দখলে নিয়ে জাল ভোট প্রদান করছে।’

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে শফিকুল ইসলাম সেন্টু তার সমর্থকরা পাশাপাশি দুই ভোটকেন্দ্র মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেঙ্গলি মিডিয়াম স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে ইমতিয়াজ খান বাবুলের সমর্থকরা পুলিশের সহযোগিতায় তাদেরকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এ সময় দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সেন্টু ও তার সমর্থকরা মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সামনে অবস্থান নেন। এ সময় ইমতিয়াজ খান বাবুল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে অবস্থান করছে বলে অভিযোগ আনেন সেন্টু। তিনি পুলিশের বাধা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া হয়। পরে পুলিশ ও সেন্টুর দু’জন কর্মী ভিতরে প্রবেশ করে বাবুলকে দেখতে পায়। তখন বাবুলকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় পুলিশ।

এর কিছুক্ষণ পর বেলা ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের সকল নারী বুথের ব্যালট বাক্সের লক খুলে ফেলে জাল ভোট দেয়া হচ্ছে বলে আবারো অভিযোগ করেন সেন্টু। এ সময় সেখানে উপস্থিত মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উত্তমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই কেন্দ্রের মধ্যে প্রবেশ করে। তখন গণমাধ্যমকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে এসআই উত্তম বাধা দেন। বাধার প্রসঙ্গে এসআই উত্তম বলেন, ‘ভেতরে কি হচ্ছে তা আমরা দেখবো। কোনো সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। দুজনের বেশি সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশে নিষেধ আছে। দুজন এমনিতেই ভেতরে রয়েছেন। তাই আর কেউ ঢুকতে পারবেন না।’

এ সময় সাংবাদিকরা ৫ জন করে সাংবাদিক কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি আছে জানালে উত্তম বলেন, ‘আমাকে এমন নির্দেশ দেয়া হয়নি। আপনারা যে যেভাবে পারেন যতো উপরে পারেন ফোন দিন। আমি ঢুকতে দেবো না। আমাদের সহযোগিতা করুন। লিখে দিন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। আর সহযোগিতা না করলে আমরা খারাপ আচারণ করতে বাধ্য হবো।’

পুলিশি বাধায় সাংবাদিকরা অবস্থান নিলে সেন্টুর কর্মীরা সব কেন্দ্রে জাল ভোট হচ্ছে অভিযোগ করে আবারো কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চেষ্টা করে। এ সময় কর্তব্যরত র‌্যব সদস্যরা প্রথমে তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। র‌্যাবের বাধা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা সেন্টুর সমর্থকদের উপর লাঠিচার্জ করে। এতে সাধারণ বেশকিছু ভোটারও আক্রান্ত হন।

ওয়ার্ড ৩২: বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল কেন্দ্র
সকাল থেকে বেশ সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ হয় মোহাম্মদপুরের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কেন্দ্রটি পরিদর্শনে যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। প্রায় পনের মিনিট তিনি কেন্দ্রটির বিভিন্ন ভোটবুথ পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে যান। বিশাল গাড়িবহর নিয়ে ভোটকেন্দ্রটি থেকে সিইসি বের হতেই শুরু হলো উত্তেজনা। ৩২নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও অপর এক প্রার্থী আবুল হাশেমের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় তর্কবিতর্ক। পরে তা মারমুখিতায় রূপ নেয়। অবশ্য বড় ধরনের কিছু ঘটার আগেই পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কিন্তু এরপর থেকেই পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যেতে থাকে। বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে ওই কেন্দ্রে গেলে দেখা যায়, কেন্দ্রের প্রবেশমুখে চার গাড়ি বিজিবি সদস্য সশস্ত্র পাহারা দিচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামানও ছিল।

সূত্রঃ বাংলামেইল২৪ডটকম

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More