সুন্দরী প্রতিযোগিতা ষোড়শী মেয়েদের দিয়ে ব্যবসা: মম

0

Momoজাকিয়া বারী মম। মিডিয়ায় আগমন ঘটে একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। হুমায়ুন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিনয় জগতে প্রবেশ। এরপর নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে এ জগতেই তার দীর্ঘ বিচরণ। দর্শক নন্দিত এই তারকা নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বললেন ঢাকারিপোর্টটোয়েন্টিফোর.কমের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ
ঢাকারিপোর্টটোয়েন্টিফোর.কমের পক্ষ থেকে মম’র কাছে প্রথমেই তার সাম্প্রতিক কাজ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। মম অনেকটা ক্ষেদ ও ক্ষোভের সাথে জানালেন, ‘আমরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করি, অথচ আমাদের কাজের কোনো মূল্য নেই। কলকাতার থেকে আমাদের নাটক অনেক ভালো হওয়া সত্ত্বেও মানুষ তা দেখছে না। দেখছে কলকাতার জিটিভি। এটা হচ্ছে মানুষের ভেতরে দেশপ্রেম না থাকার কারণে। এক শ্রেণীর সার্টিফিকেট ধারী গৃহিনী আছে যারা কল্পনার রাজত্বে বসবাস করে। আমি বলতে চাই যে, কল্পনায় বসবাস করে লাভ নেই। দেশকে ভালবাসুন।’
বর্তমানে বিনোদন জগত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিনোদন সেক্টরে আমরা যারা আছি তাদের কোনো পেট্রোনাইজ করা হয় না। আমাকেও কেউ পেট্রোনাইজ করে নাই। আমি যদুমধুদের সাথে কাজ করে মম নামটাকে এস্টাবলিশ করেছি। তারপর বড় ডিরেক্টররা আমার নামটাকে সেল করার জন্য এখন আমাকে অনেক টাকা দিয়ে কাস্ট করে। এটা কিন্তু আমার একটা দুঃখবোধ।’
মম এ পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তার ভাষায় এ পুরস্কারের সংখ্যা প্রায় ২৭টি। বর্তমান পুরস্কার দাতাদের হালচাল সম্পর্কে তিনি তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘দলীয়করণ আর নোংরামির ভেতরে সবাই ডুবে গেছে। প্রথম আলো পুরস্কার মানেই জয়া আহসান, প্রথম আলো পুরস্কার মানেই ফারুকী, মোশারফ করিম। তারাই কিন্তু শুধু অ্যাক্টর নয়, তারা এতই অবাঞ্ছিত অভিনয় করেন যে সেটা নেওয়ার মতো না। তাহলে তারা কিভাবে বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পান। মুখে কালি মেখে অভিনয় করে যদি বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়া যায়, তাহলে তো রাস্তার একটা ছেলেও অভিনয় করবে, হচ্ছেও তাই।’
এটা কি প্রথম আলো পুরস্কার পাননি বলে বলছেন, ‘প্রথম আলো আমাকে পুঁছল কি-না তাতে আমার কোনো খেদ নেই, বরং আমিই প্রথম আলোকে পুঁছি না। প্রথম আলোর চেয়েও বড় পুরস্কার আমার ঘরে আছে। ফিল্মে অভিনয় করার জন্য বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট আমাকে বেস্ট অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার দিয়েছে। এটা প্রথম আলোর দশটা অ্যাওয়ার্ডের চেয়েও অনেক বেশি, অনেক সম্মানের।’
অভিনেতা কেমন হওয়া দরকার সে সম্পর্কে মম বলেন, ‘অভিনেতা হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে, প্রতিমুহূর্তে একজন মানুষের পরিবর্তিত সাইকোলজি নিয়ে কাজ করেন, যিনি একজন মানুষকে লাইভ উপস্থাপন করেন, তিনিই প্রকৃত অভিনেতা।’
অভিনেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে মম বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ আর্টিস্টের প্রপার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। যেমন ধরেন তিশা কিন্তু লেখাপড়া কমপ্লিট করে নাই। কোথাকার কোন টেলিকমিউনিকেশনে পড়তো, আজীবন পড়েই যাচ্ছে। বিন্দু জাহাঙ্গীর নগর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। মীম জাহাঙ্গীরনগরে আমার ডিপার্টমেন্টেই পড়তো। পরপর দুইবার ফেল করায় বহিষ্কৃত হয়েছে। শুধু তারা নয় খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ম্যাক্সিমাম আর্টিস্টেরই এই অবস্থা।’
প্রচুর সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে, তিনিও একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই এসেছেন।
এ ব্যাপারে মমর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি বলেন, ‘পৃথিবীব্যাপী সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে একটা ব্যবসা। মেয়েরা হচ্ছে ব্যবসার উপকরণ। ছোট কাপড়ের মেয়েরা ব্যবসার ভাল উপকরণ, আর বড় কাপড়ের মেয়েরা ব্যবসার অপেক্ষাকৃত কম উপকরণ। আমি নিশ্চয় বিষয়টা বুঝাতে পেরেছি। তাই সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুধু ব্যবসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর চেয়ে বেশি কিছু না। সুন্দরী হতে হলে যে শুধুমাত্র গড গিফটেড চেহারা, সুন্দর চোখ নিয়েই আসতে হবে তা নয়। সুন্দরী হলো মেধা, বুদ্ধি ও শিক্ষার সমন্বয়।’
আমাদের দেশের একজন সুন্দরী প্রতিযোগিতার কর্ণধারকে বলতে শুনেছিলাম যে, ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা নাকি ষোড়শী ছাড়া হয় না। তরুণীদের প্রতিটি বয়সে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আছে বটে, কিন্তু ষোড়শী সুন্দরীর মেধা কোন লেভেলের থাকে যে সে সৌন্দর্যটা ক্যারি করতে পারবে? পারে না। কারণ অল্প বয়োসী মেয়েদের পিক করা হয় বিপথগামী করার জন্য। যারা বুদ্ধিমান, যারা বিচক্ষণ তারা হয় তো ঐ ট্র্যাপে পা না দিয়ে নিজের একটা আইডেন্টি তৈরি করতে চেষ্টা করে। কিন্তু প্রধান উদ্দেশ্য থাকে অল্প বয়োসী ষোড়শী সুন্দরীদের নিয়ে ব্যবসা করা। এটা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি।’
মম’র অভিনয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত এমন চরিত্রে অভিনয় করতে চাই যা দেখে আমার দর্শক নতুন কিছু পায়।’
মম এ পর্যন্ত অসংখ্য ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটকে কাজ করেছেন। নাটকের মানের প্রসঙ্গ টানতেই তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চ্যানেল বেশি, কম্পিটিশন বেশি, কিন্তু এই কম্পিটিশন সুস্থ কম্পিটিশন না, অসুস্থ কম্পিটিশন। কম বাজেটে কিভাবে অথর্ব ডিরেক্টর দিয়ে, অযোগ্য ক্রু দিয়ে, অযোগ্য আর্টিস্ট দিয়ে কম দামে বানিয়ে কিভাবে বেশি দামে নাটক সেল করা যায় এটাই হচ্ছে চ্যানেল মালিকদের উদ্দেশ্য। ভাল উদ্দেশ্যের ঘাটতি থাকলে প্রোডাক্টের কোয়ালিটি এমনই হবে।’
পরিচালকদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে আর্টিস্ট আছে ধরেন ৫০ জন আর ডিরেক্টর আছে ৪০০ জন। তার মধ্যে আলু, পটল, ভেংরি, কোমড়া প্রতিদিনই গজাচ্ছে। যে কিছুই পারে না সে প্রোডাকশনে কাজ করে আর যে নিজেকে তার চেয়ে আরেকটু বেটার মনে করে সে হচ্ছে ডিরেক্টর। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে বাংলাদেশে প্রচুর ডিরেক্টরের মধ্যে ভাল ডিরেক্টর পাবেন হাতেগোনা দশজনকে। কিন্তু তারা একটা কাজ করতে গিয়ে এতই খরচ করে যে, প্রডিউসার ভেগে যায়। তাহলে আমরা বড় নামজাদা ডিরেক্টরদের কাছ থেকেই বা কি আশা করতে পারি। আমার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি একজন বড় ডিরেক্টরের একটা কাজ করি। তিনি এত বড় মাপের ডিরেক্টর যে তার নাটকে কাজ করার সৌভাগ্য এর আগে আমার হয়নি। আমি সেই সৌভাগ্য অর্জন করার জন্যই সেই ডিরেক্টরের নাটকে কাজ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম যে, তিনি যে কাজ দু’দিনে করতে পারতেন সে কাজ করতে তিন থেকে চারদিন লাগিয়ে দিয়েছেন। কারণ তিনি যে বেশি টাকা নিয়েছেন এবং এটা খরচ করেছেন তা তো চ্যানেল বা প্রডিউসারকে বোঝাতে হবে যে, আমি আমার টাকাটা জায়েজ করেছি।’

সূত্রঃ ঢাকারিপোর্টটোয়েন্টিফোর.কম

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More