আন্তর্জাতিক তৎপরতায় সরকার ক্ষুব্ধ

0

intarnationalসিটি নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বের অবস্থানে সরকার ক্ষুব্ধ। এ নির্বাচনে দখল ও কারচুপি নিয়ে জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নানা সমালোচনা এবং অনিয়ম তদন্তের দাবিতে খুবই বিরক্ত সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতারা। তারা এটিকে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ অভিহিত করে বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এমন অভিযোগ করার কোনো অধিকার বিদেশীদের নেই। এ ছাড়া ভোটের দিন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত নিজেরাই ভোট প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন কেউ। কেউ কেউ আবার বলছেন, আমরা কারো খাইও না পরিও না। তাই আমাদের নিজস্ব বিষয় নিয়ে নাক গলানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া বিদেশীদের আলোচিত এক-এগারোর কারিগর বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।

গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওপর কড়া নজরদারি করেছে জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তারা গণতন্ত্রের স্বার্থে এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকারের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম, কেন্দ্র দখল এবং বিএনপি জোট সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের খবরে হতাশ হয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক মহল। নির্বাচনে অনিয়মের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে জাতিসঙ্ঘ। শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোনও করেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন। এর আগে নির্বাচনের দিন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, যেকোনো মূল্যে জেতা আসলে কোনো বিজয় নয়। পরে নির্বাচনে জালিয়াতি ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন পাওয়া গেছে বলেও জানায় দেশটি। ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনও সব অনিয়মের তদন্ত দাবি করেন। একইভাবে জালিয়াতি ও সহিংসতায় সিটি নির্বাচন কলঙ্কিত হয়েছে বলে বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সিটি নির্বাচনকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, আরেকটি ভুয়া নির্বাচন প্রত্যক্ষ করল বাংলাদেশ। সিটি নির্বাচনে অনিয়ম আর সহিংসতায় সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানান ঢাকা সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শ্যারমানসহ প্রতিনিধিরা।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচন নিয়ে জাতিসঙ্ঘসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর এমন সরব অবস্থানে বিপাকে পড়েছে সরকার। এই নির্বাচনের কারচুপি নিয়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হওয়া খবরে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা। সে জন্য নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনিয়মের তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচন নিয়ে বিদেশীদের ‘অতি উৎসাহে’ চরম বিরক্ত সরকার। তাদের একের পর এক বিবৃতি এবং টেলিফোনে বেজায় ক্ষুব্ধ সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শ্যারমানের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাাৎকারে বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এমন অভিযোগ করার কোনো অধিকার বিদেশী বন্ধুদের নেই। আমেরিকার সাম্প্রতিক দাঙ্গার রেশ ধরে আয়নায় নিজের চেহারা দেখার পরামর্শও দেন তিনি।

তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, ভোটগ্রহণের সময় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ভোটগ্রহণে চরমভাবে বিঘ্ন ঘটিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে এ বিষয়ে সজাগ থাকা উচিত ছিল মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাটের। সেই সাথে তিনি প্রশ্ন তোলেন মার্কিন দূতাবাসের কিছু পলিটিক্যাল অফিসারের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমেরিকার ভিন্ন অবস্থানের সমালোচনা করেন তিনি। বাংলাদেশের আলোচিত এক-এগারোতে বিদেশীদের অবস্থান সম্পর্কে ইঙ্গিত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য করার আগে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।

সিটি নির্বাচন নিয়ে হতাশ ও উদ্বেগ প্রকাশ করায় জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শ্যারমানের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গতকাল বলেছেন, আমরা কারো খাইও না, পরিও না। নির্বাচনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে আপনারা মন্তব্য করলেন। কি তথ্যউপাত্ত প্রমাণ আছে? স্বল্প সময়ে কি যন্ত্রের সাহায্যে তিন হাজার ভোট কেন্দ্রের তথ্যউপাত্ত পেলেন?

যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে সরকারের প্রভাবশালী এ মন্ত্রী আরো বলেন, রাজনীতির খেলা খেলবেন না। একাত্তরে খেলেছেন পারেননি। আগুন সন্ত্রাসী খালেদা জিয়াকে রাজনীতির ময়দানে হালাল করার চেষ্টা করবেন না।

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মনি এ প্রতিবেদককে বলেন, একটা স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের এত আগ্রহের কোনো কারণ নেই। কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়ম ও ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। আরো অনেক দেশেই তা হয়। কিন্তু সেসব নিয়ে কেউ মন্তব্য করেন না বা প্রতিক্রিয়া দেখান না। তাই আমরাও মনে করি আমাদের নিজস্ব একটি নির্বাচন নিয়ে কারো কোনো মন্তব্যের জায়গা নেই।

তবে সিটি নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বের উদ্বেগ ও হতাশায় সম্পর্কের অবনতি হবে না দাবি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এই সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত বাইরে থেকে মন্তব্য আনার ব্যাপারে বিপুল অর্থের বিনিময়ে লবিং করে। এসব নিয়ে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাও অনেকের কাছে আগ্রহের বিষয়। তাই তারা যে বিরূপভাবে মন্তব্য করছেন সেটাও নয়। তবে একটি স্থানীয় নির্বাচনে এত প্রতিক্রিয়া অনভিপ্রেত। কারণ, বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড ও নানা ধরনের বৈষম্য ঘটছে। তা নিয়ে আমরা কেউ মন্তব্য করছি না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More